কলাতংক

সেদিন গয়লার বউ আসিয়া এক ঘটি দুধ দিয়া গেলো। দুধ উনুনে জ্বাল দিবামাত্রই দেখি হাড়িতে চিংড়ি মাছ লাফাইতেছে। গরু কি আজকাল দুগ্ধের সহিত চিংড়ি মাছও প্রসব করিতেছে? বড়ই আছানক ঘটনা..!!

গয়লার বউকে আচ্ছা করিয়া ধরিলাম। বলো বেটি,দুধ এমন হইয়া গেলো কেনো? তুমি কি দুধে পানি মেশাও?

বেটি কহিলো,
ছি ছি বাফদন,দুধে হানি মিশাইতাম কিত্তে;হানিতে দুধ মিশাইচি।

আমি কহিলাম,
সে না হয় সব গোয়ালাই মেশায়। কিন্তু চিংড়ি মাছ?

অতঃপর,বেটি বৃত্তান্ত কহিলো,এবার এত বৃষ্টি হইয়াছে যে,খালের পানি টিউবয়েলের উপর দিয়া প্রবাহিত হইতেছে। স্থল আর পাতাল জলের সমসত্ত্ব মিশ্রণ। উপায়ান্তর নাই দেখিয়া খালের পানিই দুগ্ধের সহিত মিশাইয়া দিয়াছে।

আম্মাজান কহিলো,গয়লার বউয়ের দুধ আর তোর খাইতে হবে না বাপ,তোর ভাইয়ের কাছে যা। তার দুটো গাই। গিয়া বল আগামী দুইদিন যেন দুধ পাঠায়। আমি এদিকে নতুন গোয়ালার সন্ধান করি।

ভাইজানকে বাটীতে পাইনাই,পাইলাম ভাবীকে। এতদূর যখন আসিয়াছি,বাতচিত করিয়া যাওয়াই ভালো। ভাবীকে বলিলাম,
ভাবী,মা বলেছেন আগামী দুইদিন দুধ দিতে।

ভাবী আমার দিকে ভ্রু কুঁচকাইয়া চিৎকার করিবামাত্রই বুঝিলাম,কোথাও একটা বেঢপ গরমিল হইয়া গিয়াছে..!!

দুগ্ধপান আপাতত বন্ধ।

এদিকে খবর আসিয়াছে,মিত্তিরের ছেলেরে পাগলা কুত্তায় কামড়াইয়াছে। কুকুর পছন্দ করিলেও কুত্তা আমি ঢের অপছন্দ করি। কুকুর ভদ্র,ওরা কামড়ায় না। কুত্তারা কামড়ায়। কুত্তার ব্যাপারে আমার কিন্ঞ্চিত এ্যালার্জি আছে।

আমার বোধগম্য হইতেছেনা,এই দিনে কুত্তায় কামড়াইলো ক্যান? এখন তো আষাঢ় চলে,কার্তিক নহে।

খবর ঘাটিয়া জানা গেলো,সর্দারবাড়ির সবরিকলা চুরি করিতে যাইয়া মিত্তিরের ছেলে কুত্তার কামড় খাইয়াছে। এখন সদর হাসপাতালে ভর্তি।

মিত্তিরের ছেলে আমার বন্ধুর মত। নিয়মিত চুরি-চামারি দু'জনে মিলিয়াই করি। ভাগ্যিস আগেরদিন যাইনাই। গেলে এখন নাভীর নিচে চৌদ্দখান ইন্জিকশন পড়িতো।

হাসপাতালে পৌঁছানোমাত্রই দেখি,মিত্তিরের ছেলে জলাতঙ্কের রোগীর মত তড়পাইতেছে,কিন্তু তাহা জলাতঙ্ক নয়।

ব্যাপারখানা বুঝিতে একটু সময় লাগিলো আমার।

জলাতঙ্ক হইলে রোগী পানির পিপাসায় তড়পায় কিন্তু পানি আনিলেই অজানা ভয়ে তড়পাইতে তড়পাইতে কশ বাহিয়া একসময় মরিয়া যায়।

মিত্তিরের ছেলে পানি নয়,কলা কলা বলিয়া চিল্লাইতেছে কিন্তু কলা সামনে আনিলেই ফিট খাইয়া যাইতেছে। বোধহয় কলা আনিতে গিয়া কুত্তার কামড় খাইয়াছে বলিয়াই ভীতিটা পানি হইতে কলায় রূপান্তরিত হইয়াছে। ডাক্তারগণ বুঝিতে পারিতেছেন না কি করিবেন..!!

এতদূর হইতে ব্যাটাকে দেখিতে আসিয়াছি,ব্যাপক খিদা লাগিয়াছে। রোগীর জন্য কলা আনা হইয়াছে। ও ব্যাটাতো খাইতে পারিবেনা। আমিই দু'খান ছিলিয়া মুখে পুরিতেই বুঝিলাম,ইহা কেমিক্যালযুক্ত কলা।

বিরস বদনে বলিলাম,এসব ছাই কিনিয়া খাওয়ার চেয়ে চুরি করিয়া সবরিকলা কেনো,বিঁচিকলা খাওয়াও ভালো। বড় ডাক্তার চোখ রাঙাইয়া আমায় বলিলেন,রোগী জলাতঙ্কে মুমূর্ষু,আর আপনি কলার প্রসঙ্গ টানছেন?

দাঁত মেছওয়াক করিতে করিতে উঠিয়া বিজ্ঞের মত বলিলাম,আপনারা কিচ্ছুটি জানেন না। এ রোগের নাম জলাতঙ্ক নহে,ইহার নাম কলাতঙ্ক।

বলিয়াই হাঁটা দিলাম। সর্দারবাড়ির সবরিকলা সম্ভবত পাঁকিয়াছে। যা গনগনে গরম..!!



ইংরাজ শুয়োর 

সে দেশভাগের আগেভাগের কথা।

বিস্তর জমিদারি নিয়া বসিয়াছি। ইংরাজ শাসনামল চলে বটে,কিন্তু ব্যাটাদের মুখে ছাই গুঁজিয়া আমার রাজ্যশাসন দিব্যি চলিতেছে।

সেদিন ঘোরতর বর্ষণ। নদীনালা ডুবিয়া একাকার। উঠোনে পর্যন্ত পানি। বামুনের ঘরের ভেতর টেংরা মাছ লাফাইয়া লাফাইয়া ঢুকিয়া পড়িতেছে।

ঘরের এমাথা ওমাথা দ্রুতবেগে পায়চারী করিতেছি। চাকর আসিয়া কহিলো,বাবুসাব,প্রজাদের ঘরবাড়ি তো ডুবিয়া যাচ্চে। প্রভুর কি রোষানল..!!

মন-মর্জি তখন অতিশয় খারাপ। বাংলাঘরে শ্যালিকাকে তাহার মাষ্টার লাফ আর ফাল এর ব্যাকরণগত ভুল বোঝাইতেছেন। তাতে মেজাজ কিন্ঞ্চিত আরও চওড়া আরও হইয়া গিয়াছে। অগ্নিবর্ষণ করিয়া বলিলাম,তবে কি জমিদার সেই পানি শুষিয়া খাইয়া রাজ্যদ্ধার করিবে রে হারামজাদা?

না,তা নয়,বলিয়া মিনমিন করিতে করিতে গর্দভ চলিয়া গেলো।

দক্ষিণের শম্ভুনাথ আসিয়া পায়ের কাছে বসিতেই জিজ্ঞেস করিলাম,হ্যাঁ রে ব্যাটা,এবার পানি বাড়িয়া নদীর পাড় যে ধসিয়া যাইতেছে,জগদীশ কি মরিয়াছে? প্রজারা যে ডুবিয়া মরে..!!

শম্ভু কহিলো,কি আর কবো কত্তামশাই,পাড়ের গাছ যে বনবিভাগ কাটিয়া লইয়া গেছে।

-তা কি করিবে সেই গাছ দিয়া? ইংরাজদের পুচ্ছদেশে চিতা জ্বালাইবে?

-পুচ্ছদেশ হবে ক্যান কত্তা,সম্মুখের জন্যই। ব্যাটারা কন্ডোমের কারখানা দিচ্চে।

-তা আমার রাজ্য সাফ করিয়া নিজেদের পয়দা বন্ধ করা কেনো?

এতক্ষণ উকিল চুপ ছিলো। এবার সুযোগ পাইতেই বলিল,এই কন্ডোম-ফন্ডোমের জন্যই দেশটা রসাতলে গেলো। বলি ক্ষেমতা থাকে তো বাংগালের মত গন্ডায় গন্ডায় নিয়ে দেখা? প্রতিপালনের ক্ষেমতা নেই;আসিয়াছিস বাংলা শাসন করতে..!! উজবুকের দল।

মাস্টার আহ্নিকের খাবার গ্রহন করিতে যাওয়ামাত্রই শ্যালিকা আমার ঘরে ঢুকিয়া বলিল,তাই তো বলি বাবুর এত রাগ কেনো..!! মাস্টারতো আমাকে ফাল পাড়াইতে পাড়াইতেই সময় খাইলো।

চিৎকার করিয়া শবনমকে ডাকিয়া বলিলো,বলি হুজুরের জন্য আমোদের ব্যবস্থা করা হউক বৈকালে। তা না হলে মেজাজ নামিবেনা।

জলসাঘরে প্রবেশ করিতেই দেখি নর্তকীদের কলতান। এক বেটি আরেক বেটিকে খোঁচা মেরে বলিলো,বাবুরে দেকেচো? খুশি করলে নজরানা ভারি হবে..!! প্রত্যুত্তরে চোখ রাঙাইয়া তাহার সখী উত্তর দিলো,অা মলো যা..!! মাগীর সঙ দেকো..!! বাবু কি আমার নাগর লো?
বলিয়াই খিক খিক হাসিতে ঘর সরগরম করিয়া ফেলিলো।

ভ্রু কুঁচকাইয়া বলিলাম,সব মাগীকে বিদায় করা হউক। ঘরে বউ থাকিতে বাইরে কিসের আমোদ?

শয্যাগৃহে ঢুকিতেই ছোটগিন্নী বলিল,সাহেব যে আজ বড় উতলা? কি হয়েচে?

-কি আর হবে? ইংরাজ শুওরেরা যে গাছ কাটিয়া নদীর পাড় সাফ করিয়া দিয়াছে। এখন অনাথ সব ডুবে মরে।

-সে তো বুঝি। কিন্ত অবেলায় যে এই ঘরে?

ইতস্তত করিয়া বলিলাম,বাদলা দিন। ইংরাজ শুওর খোসা বানিয়ে আমোদ করে। জমিদার কি ওসব ডরে? গন্ডায় গন্ডায় না হলে জমিদারি খাবে কে?

ছোট গিন্নী আতঙ্কিত হইয়া কহিলো,এভাবে সবাই পুত্তুর জন্মাইতে থাকিলেতো একসময় জমিদারি কেনো,দেশে তিল ধারনের ঠাঁই হবেনা।

কপাট লাগাইতে লাগাইতে বলিলাম,ওসব তত্ত্ব ছাড়ো। জানি ঠাঁই হবে না,কিন্তু বাঙ্গালী শাক দিয়ে মাছ ঢাকেনা।


হাগা বাবা


- কখনও নিজের মল হাত দিয়ে চটকিয়েছেন কি?

- আমি চটকাবো ক্যান? আমার ভক্তরা চটকায়। আমি চটকাইলে তো নাম গু বাবাই হইতো।

ঝাঁঝালো গলায় উত্তরগুলো দিচ্ছিলেন আকবর বস্তানী ওরফে হাগা বাবা।

বেশ দূর থেকে গিয়েছিলাম বলেই ঝাঁঝালো কথাগুলো হজম করছিলাম। নাহলে মুয়িদ সাহেব কি জিনিস দেখিয়ে দিতাম..!! একটা রিপোর্ট করলেই পুলিশের বাড়ি যখন পাছায় পড়তো তখনই বাবাজী টের পেতো কার সাথে ঝাঁঝিয়েছে।

তিনদিন আগে খবর পাই,নওগাঁর প্রত্যন্ত এক গ্রামে একজন ক্ষমতাশীল বাবা বাস করেন। লোকে তাকে হাগা বাবা বলে ডাকে।
মাটি বাবা,পানি বাবা,জুতা বাবা,ন্যাংটো বাবা আরও কত বাবার নাম শুনেছি। এরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বকীয়। যেমন মাটি বাবা মাটি খান,ন্যাংটো বাবা কাপড় পড়েন না। এমনকি গু বাবারও নাম শুনেছি যিনি গায়ে গু মেখে বসে থাকেন। কিন্তু হাগা বাবার নাম এই প্রথম শুনলাম। কৌতুহল হতেই চলে গেলাম।

নাম হাগা বাবা হলো কেনো সেটা এক মুরিদের কাছে জিজ্ঞেস করতেই মুরিদ কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো,হাগা বাবা গায়ে কোনো গু-টু মাখেন না। তাহলে তো গু বাবা ই নাম হতো। উনি কোনো খাদ্য গ্রহণ না করে শুধুই হাগেন অর্থাৎ সারাক্ষণ পয়োনিষ্কাশনের উপরেই থাকেন।

হাগাবাবা নাম হলেও দরবারে কোনো মলমূত্রের চিহ্নও নেই। একদম পরিষ্কার। কারণ বাবা প্রায় সারাদিন টয়লেটেই থাকেন আর সেখানেই প্রক্ষালন সারেন। একান্ত অনুরাগী ভক্তরা সেখান থেকেই প্রয়োজনানুসারে নিয়ে যায়। বাবা শুধু মিনিট দশেকের জন্য দরবারে এসে ভক্তদের সাথে কথা বলেন।

মুরিদ আরো জানালো,বাবা সর্বরোগের চিকিৎসা করলেও ডায়রিয়া,আমাশয়,কষা এমনকি পাইলসেরও চিকিৎসা করার জন্য বিখ্যাত। ফুঁ দিলেই পাইলস সেরে যায়। অপারেশন লাগে না।

আমি বাবার কাছে গিয়ে বললাম,
- আপনি সারাক্ষণ হাগেন এটা কোনো অলৌকিক ক্ষমতা না। আপনার মলদ্বারে স্ফিংক্টার জনিত কোনো সমস্যা আছে নয়তো আপনার পরিপাক ক্রিয়া অতি বেশি সক্রিয়।

হাগা বাবা গম্ভীর গলায় উত্তর দিলেন,
- আপনে শহর থেকে আইছেন। তাই বিশ্বাস হইতাছেনা। যাউকগা,আপনারে বিশ্বাস করাইতে আমার ঠ্যাকা পড়েনাই।

আমি দেখলাম,ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে। বাবা রেগে গেলে আর কথা বেড়োবেনা। সুরটা তাই একটু নরম করে বললাম,
- আপনার যে অলৌকিক ক্ষমতা আছে,সেটা কিভাবে টের পেলেন?

- সে এক বিরাট হিস্টোরি। একদিন মাগড়াপাড়া থেইক্যা গাড়ি কইরা বরযাত্রী যাইতাছিলাম বইদ্যারবাজারে। মাঝখানে ঘন জঙ্গল। ডাকাতগো আখড়া। ডাকাতরাও তাড়া করলো। হঠাৎ জঙ্গলের মইধ্যেই গাড়ির তেল শেষ হয়া গেলো। তেল ছাড়া তো জানে খতরনাক অবস্থা। আমি নাদান বাচ্চা,ভয়ের চোটে পিশাব বাইর হয়া গেলো। হইলো তো হইলোই,এক্কেবারে তেলের ট্যাংকিতে। গাড়ি স্টার্ট হয়া গেলো।

আমি বললাম,
- ডিজেল ইন্জিন তো পানিতেও কিছুদূর আগায়।

হাগাবাবা বললেন,
- আরে ঘটনা তো এইখানেই শেষ না। সেইদিন রাইতেই স্বপ্নে এক ওলী আইসা কইলো,তুই আইজ কত মানুষের জান বাঁচাইছোত। তরে আমি বর দিলাম। তুই আজ থেইক্যা শুধুই হাগবি। সেই হাগা মানুষ মাথায় কইরা রাখবো।

বাবা এক ঘন নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,এই হইলো হিস্টোরি। বুঝছেন?

এ ঘটনা শুনে আমি মনে মনে নিজেকে গালাগালি দিচ্ছি। ঢাকায় ফিরে হারামজাদা আব্বাসরে পিটাইতে হবে। ও না বললে জীবনেও এমন ভন্ড লোকের কাছে আসি আমি?

হাগাবাবা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
- বাপজান,আপনারে কয়েকটা জ্ঞানের কথা বলি। মানুষের জীবনের দুই অবস্থা। খাওয়া আর হাগা। এই দুইটার একটা মিস গেলোতো মানুষ শেষ। হাগারে তুচ্ছতাচ্ছিল্য কইরেন না। আমার পরদাদায় কইতো,হাগাতে স্বর্গীয় সুখ। পেটে চাপ পড়লে বুঝা যায় জাহান্নাম কই।

এক মুরিদ পাশ থেকে চিৎকার করে বলে উঠলো,মারহাবা বাবা..!! বড়ই জ্ঞানের কথা।

বাবা বলতে লাগলেন,
- দ্যাখেন বাপ,দুনিয়াতে হাগামুতা কইরাই তো কত দেশের জন্ম হইলো। আপনারা তো অলৌকিক ইতিহাস জানেন না। উরুগুয়ে মানে উরুতে গু; প্যারাগুয়ে মানে গুয়ে প্যারা; তেলেগু মানে তেলের মধ্যে গু। আবার অংকের বইয়েই কি সব লসাগু কষাগু আছে..!! দুনিয়ার এক বিরাট অংশ আমরা এইভাবেই তো ভইরা ফালাইছি।

এতক্ষণ মেজাজ যাও শান্ত ছিলো,এইবার তা সপ্তমে উঠে গেলো। আমি লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম,আচ্ছা ফালতু লোকতো আপনি। আন্দাজে ফান্দাজে যা মনে আসতেছে তাই ই বলতেছেন। ভন্ডের বাচ্চা,পাছায় পুলিশের বাড়ি পড়লে হাগামুতা সব বের হয়ে যাবে।

আর এখানে থাকা যায় না। গাড়িতে উঠে পড়লাম। স্টার্ট দেওয়ার পর অগ্নিঝরা দৃষ্টিতে ভন্ডের দিকে তাকালাম। দেখলাম ব্যাটা হাসছে আর আমার দিকে দাঁত কেলানো হাসি দিয়ে বললো,
- বাপজান,আমার ক্ষেমতা টা বিশ্বাস করলেন না। চিন্তা নাই,শীঘ্রই বিশ্বাস হবে। দুনিয়াটাই ঘুরে হাগার উপর।

আব্বাস ছিলো আমার বাড়ির দাড়োয়ান। ফাযলামি আমি একদমই পছন্দ করি না। সেদিনই হারামজাদাকে ঘাড় ধরে বিদায় করে দিয়েছিলাম। রহস্যময় কিছুর ঠিকানা দিবি তো ভালোমত কিছু দে। আলতু-ফালতু জিনিসে কেনো..!!

সেদিনের পর মাসখানেক কেটে গিয়েছে। ইদানিং একটা সমস্যায় পড়েছি। নাকে শুধু টয়লেটের গন্ধ আসে। সে যতই পারফিউম কিংবা এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার করি।

সেদিন পার্টিতে যাবো,ইয়াসমিন রেডি হয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। জিজ্ঞেস করলো ওকে কেমন লাগছে। ওর
দিকে তাকাতেই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। আমি তৎক্ষণাৎ নাকে হাত চাপা দিলাম।

ওর শরীর থেকে তীব্র বিশ্রী একটা গন্ধ বের হচ্ছে। ঠিক যেনো...


রহমত মিয়ার স্বপ্ন


"তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন,গতকাল আপনার মৃত মেয়েকে স্বপ্নে দেখেছেন?" শুয়োপোঁকাটা ফ্যাঁসফ্যাঁসে গলায় রহমত মিয়া কে জিজ্ঞেস করলো।

"তাইলে কি আমি মিছা কথা কইতাছি? আজিব প্রশ্ন..!!" রহমত মিয়ার সুরে ভয় আর বিরক্তি ঝরে পড়লো। আজ বাদে কাল ঈদ। কি ঝামেলায় পড়া গেলো..!!

এইতো পাঁচ মিনিট আগের কথা।
সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে। রহমত মিয়ার দীর্ঘদিনের অভ্যাস,ক্ষেতের কাজ শেষে বাড়ি ফেরার আগে পাশের জংলামত জায়গায় প্রাকৃতিক কর্ম টা সারা। পেট টা কয়দিন ধরে খারাপ যাচ্ছে। এমনিতে একগাদা প্রক্ষালন বের না হলে রহমত মিয়ার মেজাজ চাঙ্গা হয়না,তার উপর চলছে আমাশয়। স্বাভাবিকভাবেই মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে আছে। ঠিক তখনই পিরিচের মত কি একটা এসে সরাসরি তার ক্ষেতে নামলো।

"হায় হায়,পুরা ক্ষেত নষ্ট কইরালাইলো রে..!!" চিৎকার করতে করতে রহমত মিয়া দৌঁড়ে পিরিচটার সামনে যেতেই হতবাক হয়ে গেলো। ক্ষেতের মাঝে পড়ে আছে এক বিশাল ধাতব টুকরো।

ফুঁস করে একটি শব্দ হতেই সে দেখলো,ধাতব যন্ত্রটার উপরের একটা অংশ খুলে গেলো আর বিশালাকার চারটে শুয়োপোঁকার মত প্রাণী বের হয়ে আসলো। রহমত মিয়ার মুখ বিষ্ময়ে হা হয়ে গেলো।

শুয়োপোঁকাগুলো মাটিতে বুক ঘষতে ঘষতে তার সামনে এসে দাঁড়ালো। দ্রুত সন্ধ্যা নেমে আসছে। রহমত মিয়া আশেপাশে একজন জনমানুষের চিহ্নও খুঁজে পেলো না। এ সাক্ষাত জ্বীন-ভূতের কারবার। রহমত মিয়া জানে,জ্বীনেরা অনেক রূপ ধরে মানুষের সামনে আসে। এ জিনিসগুলা জ্বীন না হয়েই যায় না..!!

হঠাৎ একটা শুয়োপোঁকা ফ্যাঁসফ্যাঁসে গলায় কথা বলে উঠলো,
-কেমন আছেন রহমত সাহেব?

বিষ্ময়ের ঘোর তখনও কাটেনি রহমত মিয়ার। অস্ফুট স্বরে বলে উঠলেন,
- আরি..!! পোকায় দেহি আবার কথা কয়..!!

- আমরা পোকা নই রহমত সাহেব। আমরা নুৎসু।

- কিহ? খুৎসু? জ্বীনেগো নাম সন্দেহ করি। পরশুদিন গয়রা কবিরাজ খুৎসু না ফুৎসু নামের এক জ্বীনরে বোতলে হান্দাইছিলো। আপনেরা কি তার গুষ্টির?

- জ্বী না,আমরা নুৎসু। আপনারা যেমন মানুষ,আমরা তেমন খুৎসু। আপনাদের ভাষায় আমরা এলিয়েন।

- কি কন এইগুলা? এলিয়েন ফেলিয়েন..!! আপনেরা কইত্থেইকা আইছেন?

- এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি থেকে। আমরা যেই গ্রহে বাস করি তার নাম কিউকাম্বার।

রহমত মিয়া চোখ কুঁচকে গলাটা উঁচু করে বললো,
- ফাইযলামি করেন? আমারে মূরুক্ষ পাইছেন? আমি কেলাশ এইট পাশ। কিউকাম্বার মানে শশা। আপনেগো গ্রহের নাম শশা? যাউকগা,আমার ধারে কেল্লিগা আইছেন?

রহমত মিয়ার আতঙ্ক আর ভয় দুটোই অনেকটা কমে এসেছে। জ্বীন-ফীন জীবনে বহুবার দেখেছেন। কালা বৈদ্দ্যের সাথে দুই বছর ছিলেনও। ভয় তাই সওয়া আছে।

- আমরা পৃথিবীতে এসেছি এক অতিপ্রাকৃত জিনিসের গবেষণায়। মানুষ স্বপ্ন দেখে। নুৎসু রা স্বপ্ন দেখেনা। দয়া করে স্বপ্ন জিনিস টা কি ব্যাখ্যা করবেন?

- স্বপ্ন? মানে খোয়াব? কইতে পারিনা তো। ঘুমাইলে স্বপন দেহি।

- কি দেখেন স্বপ্নে?

- কত কিছুই তো দেহি। কয়ডা মনে থাহে আবার অনেকগুলা থাহে না।

- শেষ কবে স্বপ্ন দেখেছিলেন?

- গতকাইল রাইতে।

- কি দেখেছিলেন?

- ছোডো মাইয়াডারে দেখছি। দেহি সন্ধ্যায় গফুরের ক্ষেতের মাঝখান দিয়া যাইতাছি,মানিক আমার পিছন থেইক্যা বাপজান কইয়া ডাক দিলো,তারপর দৌঁড়াইয়া আইসা কোলে উঠলো।

একটু নিঃশ্বাস নিয়ে আবার বলতে লাগলো রহমত মিয়া,
-মাইয়াডার নাম আছিলো পরীবানু। পরীর মত দেখতে। চাইর বছর থাকতে নিউমোনিয়ায় মইরা গেলো..
বলতে বলতে চোখ ভিজে উঠলো রহমত মিয়ার।

- এইটুকুই?

- হ। এইডুকুই। দেহেন,আন্ধার হইয়া গেছে। ইদের চাঁন উঠছে। ওই দেহেন। বাড়িত যাওন লাগবো। ইদের বাজার করতে অইবো। ছাড়ান দেন।

- শেষ প্রশ্ন রহমত সাহেব। স্বপ্ন কি সত্যি হয়?

- আজিব প্রশ্ন..!! আমি কি পীর-আউলিয়া নাহি যে স্বপ্ন সত্যি অইবো? ছাড়ান দেন তো।

- আচ্ছা,আমরা চলে যাচ্ছি। আপনার কাছ থেকে যথেষ্ঠ তথ্য পেলাম না। তবে আমরা স্বপ্ন না দেখলেও মানুষের স্বপ্নে দেখা জিনিস বাস্তবে ঘটাতে পারি। আপনি চাইলে আপনার মৃত মেয়েকে আবার জীবতবস্থায় এনে দিতে পারি।

- কি কন..!! ক্যামনে?

- মহাবিশ্বের অপার্থিব জিনিসগুলো চতুর্মাত্রিক আর পন্ঞমাত্রিক জগতে থাকে। আমরা সেসব জিনিস সংকুচিত করে ত্রিমাত্রিক জগতে আনতে পারি।

রহমত মিয়া বিরক্তির সুরে বললো,
- কি কয় এইসব,কিছুই বুঝি না। ধুরো..!! দূর হন তো। আইছে আমার ইছা নবী..!!

হঠাৎ রহমত মিয়া দেখলো তার সামনে কেউ নেই। খানিকটা এদিক-ওদিক তাকিয়ে আইল ধরে হাঁটা শুরু করে বিড়বিড় করে বললো,
"যত্তোসব জিন-ভুতের কারবার। মাইয়ারে নাকি জ্যাতা আইন্না দিবো। যত্তোসব।"

গফুরের ক্ষেতের মাঝে আসতেই আকাশে ইয়া বড় ঈদের চাঁদটা রহমত মিয়ার চোখে পড়লো। পরীবানু বেঁচে থাকতে ঈদের চাঁদ দেখলেই খুশিতে লাফ দিয়ে বাপের কোলে চড়ে বসতো। ভাবতেই চোখজোড়া আবার ভিজে উঠলো।

ঈদের চাঁদের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতেই রহমত মিয়া হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো। পেছন থেকে কে যেন "বাপজান" বলে ডাক দিলো।

গলাটা একদম পরীবানুর মত

শয়তানের বাইবেল


হারম্যান রিকুলাসকে যখন চারজন রক্তাবসন সন্ন্যাসী চারদিক থেকে ঘিরে প্রধান কক্ষে নিয়ে আসলো,সে নীরবে প্রধান আসনে চোখ তুলে তাকালো। সভাকক্ষে প্রবেশকারী চার সন্ন্যাসী মাথা নুইয়ে মঠাধ্যক্ষকে সম্মান জানালেও হারম্যান তা পারলো না। কারণ,ইতোমধ্যেই সে সন্ন্যাসীর মর্যাদা হারিয়েছে।

মঠাধ্যক্ষ শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
- হারম্যান..

- জ্বী,অধীশ্বর?

- তোমাকে যে কারণে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে,সে ব্যাপারে অভিমত?

- আমরা কেউই ভুলের উর্ধ্বে নই। আমি অপরাধ স্বীকার করছি,প্রভু।

মঠাধ্যক্ষ আসন থেকে নেমে এসে হারম্যানের সামনে দাঁড়ালেন। সভাসদবৃন্দদের দিকে তাকিয়ে রায় দিলেন,
- যেহেতু হারম্যান দুর্বল মুহূর্তের কথা স্বীকার করেছে এবং এরকম অপরাধ ইতোপূর্বে মঠের আর কেউ করেনি,সেহেতু শাস্তিস্বরূপ ওকে বাকী জীবন মঠের ছোট্ট খুপরিতে কাটাতে হবে।

সাঁঝলগ্নের পূর্বাভাগে সূর্যদেবতার কমলা রংয়ের রশ্মি মঠের জানলা ভেদ করে কক্ষে ঢুকছিলো। সেদিকে তাকিয়ে হারম্যান বিষাদ সুরে বললো,
- আমার সাধনার মধ্যবর্তী সময়ে দুর্বল মুহূর্তের শিকার হওয়া কি ঈশ্বরেরই মনোখেয়াল নয়?

মঠাধ্যক্ষ ঈষৎ হেসে বললেন,
- পাপের প্রায়শ্চিত্তের বিধানও কি ঈশ্বরের মনোখেয়াল নয়?

- তবে অধীশ্বর,জিউগোফেগাসের পাপধর্ম কি শেখায়? পূন্য দিয়ে কি পাপক্ষয় করা যায় না?

- কামিনীঘটিত পাপক্ষয় সহজে কমে কি?

হারম্যান চুপ করে রইলো। মঠের ছোট্ট খুপরি সম্পর্কে অবগত সে। ইতিহাসে বেনেডিক্টকে জেনেছে মঠের সন্ন্যাসীরা। সাধু বেনেডিক্ট দীর্ঘজীবন কাটিয়েছেন সেই ছোট্ট খুপরিতে,যেটির খাদ্যগ্রহণের ক্ষুদে ফোকর ছাড়া অন্য কোনো ছিদ্র ছিলোনা। দরজার জায়গায় নিরেট দেয়াল ছিলো। বেনেডিক্ট চেয়েছিলেন সমাজে থেকেও সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে ঈশ্বরের সান্নিধ্যে যেতে।
হারম্যান হাঁটু গেড়ে মঠাধ্যক্ষের সামনে বসে পড়লো। করুণ সুরে বললো,

- সাধনার দীর্ঘকাল আপনার দীক্ষা মেনেছি। আমায় কি একটা সুযোগ দেয়া যায়না,অধীশ্বর? 

- যে মঠকে অপবিত্র করে,সে কোন সুযোগে পবিত্রতায় ভরিয়ে দেবে,বৎস?

- আমি কথা দিচ্ছি,প্রভু। দীর্ঘ সাধনার ফলস্বরূপ এমন কিছু করবো যেখানে মঠের নাম চিরকালের জন্য খ্যাতি লাভ করবে এবং মানুষের সমস্ত জ্ঞান নিহিত থাকবে। 

- তাহলে পূর্বাশীয়দের ন্যায় অগ্নিপরীক্ষা দাও। রাজি হবে?

- হবো,অধীশ্বর।

সভাসদবৃন্দদের দিকে পুনরায় তাকিয়ে মঠাধ্যক্ষ চূড়ান্ত রায় দিলেন।
- এক রাতের মধ্যে অপরাধী তার জীবনের সমস্ত জ্ঞান নথিবদ্ধ করবে। সফল না হলে মৃত্যুদণ্ড অনিবার্য। 
.
.
.
হারম্যানকে পাতালঘরে নিক্ষেপ করা হলো। স্নানাগার থেকে স্নান করে নগ্ন দেহে শুদ্ধির উপকরণ গায়ে মাখলো সে। ঈশ্বরের কৃপা প্রার্থনা করে দেয়ালে নিজের নাম খোদাই করলো। প্রার্থনায় বললো,
- ঈশ্বর কি কাছেই আছেন? তবে সমস্ত জ্ঞান এক করে দিন আমায়। জানিয়ে দিন মঠের পবিত্রতা আমার হাতে। ইতিহাসের অংশ করুন আমায়।

প্রার্থনা শেষে ধীরপায়ে টেবিলাকৃতির পাথরের খন্ডের কাছে এসে দাঁড়ালো সে। সেখানে শ'খানেক খচ্চরের চামড়া ও পাত্রে প্রাচীন খুসিয়ার্স কালি রাখা।

সাঁঝের পরলগ্নে যখন বাদুড়ের দল মঠের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিলো,তখন হারম্যান পাতালঘরে জীবনের সমস্ত অর্জিত জ্ঞান লিপিবদ্ধ করতে বসলো। ফোঁটায় ফোঁটায় কালি বসতে লাগলো চামড়াতে। 
.
.


.
মঠাধ্যক্ষ সাধনালব্ধীয় যজ্ঞ পালনে ব্যস্ততার মুহূর্তে প্রিভেগন প্রবেশ করলেন। গুরুর পাশে বসতে বসতে বললেন,
- সাধনার ইতিহাসে কেউ কি এতো কঠিন পরীক্ষা দিয়েছে,প্রভু?

মঠাধ্যক্ষ হেসে বললেন,
- শীতল পানিয়ের সুধা সবাই ই চায়। ঈশ্বর কি পরীক্ষা ব্যতীত তা দেন?

প্রিভেগন মাথা নাড়াতে নাড়াতে উঠে গেলেন। মনে মনে বললেন,না জানি পাতালঘরে কোন অলৌকিকতা আঘাত হানে..!!
.
.
.
সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। চামচিকার তীক্ষ্ণ চিৎকার যখন পাতালঘরে এসে পৌঁছলো,হারম্যান সম্বিৎ ফিরে পেলো। হকচকিয়ে উঠে দেখলো,মধ্যরাত পেরিয়ে গিয়েছে। লেখা হয়েছে মাত্র অর্ধপাতা।

দিশেহারা হারম্যান ফের প্রার্থনায় বসলো। ঈশ্বরের কাছে দাবি জানালো সাহায্যের। বেশ খানিকক্ষণ প্রার্থনার পর যখন হারম্যান গভীর ঘোরে চলে গেলো,শুনতে পেলো বহুদূর থেকে কে যেন ফিসফিসিয়ে বলছে,
"ঈশ্বরকে পাওয়া কি এতই সহজ..!! আমায় ডাকো। আমি আছি।"

হারম্যান লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।তার দেহে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেলো । দেয়ালে ঝোলানো ড্যাগারটা বাম হাতে তুলে নিয়ে ডান হাতে বসিয়ে দিলো সজোরে। রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে যখন তর্জনীতে আসতে লাগলো,খচ্চরের চামড়ায় সে চিঠি লিখতে লাগলো। খোদ লুসিফারের কাছে চিঠি। কেননা সে ছোট্ট খুপরিতে যাবজ্জীবন চায়না। বরং অপার্থিব শক্তিতে যদি ইতিহাস গড়া যায়,তা ই সই।
.
.
.
লুসিফারের কাছে আবেদন বোধহয় মন্জুর হয়েছে। ধীরে ধীরে গন্ধকের তীব্র গন্ধে ঘর ভরে উঠছে। দেয়ালের কাছে কাউকে দেখা যাচ্ছে। এগিয়ে আসছে সে। অগ্নিচক্ষুবিশিষ্ট ছাগলরূপী শিংওয়ালা মাথা,কাঁটাখচিত লেজ,খুরযুক্ত পা,হাতে বিশালাকার নখবিশিষ্ট চারটে আঙ্গুল স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মুখ থেকে সাপের মত চেরা লিকলিকে জিভ টা বেরিয়ে আসছে ক্ষণে ক্ষণে। নারকীয় ভঙ্গিতে এসে হারম্যানের সামনে দাঁড়ালো সে। চামচিকার মত তীক্ষ্ণ গলায় বললো,
- খোদ স্বয়ং এসেছি আমি,তোমার বাসনা পূর্ণ করতে। বিনিময়ে কি দেবে আমায়?

হারম্যান ঝিলিকযুক্ত হাসি দিয়ে বললো,
- প্রভুত্ব পরিবর্তন করেছি আমি। তুমি প্রভু সন্তুষ্ট নও?

- অবশ্যই সন্তুষ্ট। আমি লিপিবদ্ধ করে দিবো তোমার সমস্ত জ্ঞান। ইতিহাস হবে তুমি।

প্রভু লিখতে বসলেন। পাতার পর পাতা লিখে চলেছেন। হারম্যান মুগ্ধ দৃষ্টিতে সেদিকে চেয়ে আছে। লেখা হতে লাগলো ধর্ম সাধনা সম্পর্কে,কালি ফুরোতে লাগলো রোগ-জ্বরা মুক্তির ব্যাপারে,বর্ণিত হলো ডাকিনীবিদ্যা। বিষয়বস্তু বাড়ার সাথে সাথে হারম্যানের দেহও অবশ হতে লাগলো। ভোর হয়ে আসছে। বাদুড়েরা ঘরে ফিরে যাচ্ছে। হারম্যান তখনও প্রভুর দিকে তাকিয়ে ভক্তিভরে হাসছে। 
.
.
.
সূর্য যখন আলোকছটা ছেটাতে শুরু করেছে পৃথিবীতে,মঠাধ্যক্ষ সভাসদদের নিয়ে পাতালঘরে প্রবেশ করলেন।

হায় ঈশ্বর..!! বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো সবাই। হারম্যান মাটিতে পড়ে রয়েছে। ওর দেহ নীল বর্ণ ধারন করেছে।

মঠাধ্যক্ষ দৌঁড়ে গেলেন পাথরের খন্ডের সামনে। খচ্চরের চামড়ার স্তূপ সেখানে। কালির পাত্র শূন্য। 
ঈশ্বরের নাম জপে বললেন,
- জগতে কতো অলৌকিকতাই তো আছে। হারম্যান তা প্রমাণ করেছে। ঈশ্বর ওর প্রাণকে শুদ্ধ করে নিজের কাছে নিয়ে গিয়েছেন আর মঠকে দিয়েছেন জ্ঞানলব্ধ এই বই..!!

পাতা উল্টোতে উল্টোতে হঠাৎ মঠাধ্যক্ষ আর্তচিৎকার করে উঠলেন। পাতাগুলো হাত থেকে পড়ে গেলো। সবাই দৌঁড়ে আসলেন সেখানে।

এ কী? পাতায় যে লুসিফারের ছবি খোদাই করা।

এ যে,খোদ শয়তানের বাইবেল...!!!