গয়লার বউকে আচ্ছা করিয়া ধরিলাম। বলো বেটি,দুধ এমন হইয়া গেলো কেনো? তুমি কি দুধে পানি মেশাও?
বেটি কহিলো,
ছি ছি বাফদন,দুধে হানি মিশাইতাম কিত্তে;হানিতে দুধ মিশাইচি।
আমি কহিলাম,
সে না হয় সব গোয়ালাই মেশায়। কিন্তু চিংড়ি মাছ?
অতঃপর,বেটি বৃত্তান্ত কহিলো,এবার এত বৃষ্টি হইয়াছে যে,খালের পানি টিউবয়েলের উপর দিয়া প্রবাহিত হইতেছে। স্থল আর পাতাল জলের সমসত্ত্ব মিশ্রণ। উপায়ান্তর নাই দেখিয়া খালের পানিই দুগ্ধের সহিত মিশাইয়া দিয়াছে।
আম্মাজান কহিলো,গয়লার বউয়ের দুধ আর তোর খাইতে হবে না বাপ,তোর ভাইয়ের কাছে যা। তার দুটো গাই। গিয়া বল আগামী দুইদিন যেন দুধ পাঠায়। আমি এদিকে নতুন গোয়ালার সন্ধান করি।
ভাইজানকে বাটীতে পাইনাই,পাইলাম ভাবীকে। এতদূর যখন আসিয়াছি,বাতচিত করিয়া যাওয়াই ভালো। ভাবীকে বলিলাম,
ভাবী,মা বলেছেন আগামী দুইদিন দুধ দিতে।
ভাবী আমার দিকে ভ্রু কুঁচকাইয়া চিৎকার করিবামাত্রই বুঝিলাম,কোথাও একটা বেঢপ গরমিল হইয়া গিয়াছে..!!
দুগ্ধপান আপাতত বন্ধ।
এদিকে খবর আসিয়াছে,মিত্তিরের ছেলেরে পাগলা কুত্তায় কামড়াইয়াছে। কুকুর পছন্দ করিলেও কুত্তা আমি ঢের অপছন্দ করি। কুকুর ভদ্র,ওরা কামড়ায় না। কুত্তারা কামড়ায়। কুত্তার ব্যাপারে আমার কিন্ঞ্চিত এ্যালার্জি আছে।
আমার বোধগম্য হইতেছেনা,এই দিনে কুত্তায় কামড়াইলো ক্যান? এখন তো আষাঢ় চলে,কার্তিক নহে।
খবর ঘাটিয়া জানা গেলো,সর্দারবাড়ির সবরিকলা চুরি করিতে যাইয়া মিত্তিরের ছেলে কুত্তার কামড় খাইয়াছে। এখন সদর হাসপাতালে ভর্তি।
মিত্তিরের ছেলে আমার বন্ধুর মত। নিয়মিত চুরি-চামারি দু'জনে মিলিয়াই করি। ভাগ্যিস আগেরদিন যাইনাই। গেলে এখন নাভীর নিচে চৌদ্দখান ইন্জিকশন পড়িতো।
হাসপাতালে পৌঁছানোমাত্রই দেখি,মিত্তিরের ছেলে জলাতঙ্কের রোগীর মত তড়পাইতেছে,কিন্তু তাহা জলাতঙ্ক নয়।
ব্যাপারখানা বুঝিতে একটু সময় লাগিলো আমার।
জলাতঙ্ক হইলে রোগী পানির পিপাসায় তড়পায় কিন্তু পানি আনিলেই অজানা ভয়ে তড়পাইতে তড়পাইতে কশ বাহিয়া একসময় মরিয়া যায়।
মিত্তিরের ছেলে পানি নয়,কলা কলা বলিয়া চিল্লাইতেছে কিন্তু কলা সামনে আনিলেই ফিট খাইয়া যাইতেছে। বোধহয় কলা আনিতে গিয়া কুত্তার কামড় খাইয়াছে বলিয়াই ভীতিটা পানি হইতে কলায় রূপান্তরিত হইয়াছে। ডাক্তারগণ বুঝিতে পারিতেছেন না কি করিবেন..!!
এতদূর হইতে ব্যাটাকে দেখিতে আসিয়াছি,ব্যাপক খিদা লাগিয়াছে। রোগীর জন্য কলা আনা হইয়াছে। ও ব্যাটাতো খাইতে পারিবেনা। আমিই দু'খান ছিলিয়া মুখে পুরিতেই বুঝিলাম,ইহা কেমিক্যালযুক্ত কলা।
বিরস বদনে বলিলাম,এসব ছাই কিনিয়া খাওয়ার চেয়ে চুরি করিয়া সবরিকলা কেনো,বিঁচিকলা খাওয়াও ভালো। বড় ডাক্তার চোখ রাঙাইয়া আমায় বলিলেন,রোগী জলাতঙ্কে মুমূর্ষু,আর আপনি কলার প্রসঙ্গ টানছেন?
দাঁত মেছওয়াক করিতে করিতে উঠিয়া বিজ্ঞের মত বলিলাম,আপনারা কিচ্ছুটি জানেন না। এ রোগের নাম জলাতঙ্ক নহে,ইহার নাম কলাতঙ্ক।
বলিয়াই হাঁটা দিলাম। সর্দারবাড়ির সবরিকলা সম্ভবত পাঁকিয়াছে। যা গনগনে গরম..!!
ইংরাজ শুয়োর
সে দেশভাগের আগেভাগের কথা।বিস্তর জমিদারি নিয়া বসিয়াছি। ইংরাজ শাসনামল চলে বটে,কিন্তু ব্যাটাদের মুখে ছাই গুঁজিয়া আমার রাজ্যশাসন দিব্যি চলিতেছে।
সেদিন ঘোরতর বর্ষণ। নদীনালা ডুবিয়া একাকার। উঠোনে পর্যন্ত পানি। বামুনের ঘরের ভেতর টেংরা মাছ লাফাইয়া লাফাইয়া ঢুকিয়া পড়িতেছে।
ঘরের এমাথা ওমাথা দ্রুতবেগে পায়চারী করিতেছি। চাকর আসিয়া কহিলো,বাবুসাব,প্রজাদের ঘরবাড়ি তো ডুবিয়া যাচ্চে। প্রভুর কি রোষানল..!!
মন-মর্জি তখন অতিশয় খারাপ। বাংলাঘরে শ্যালিকাকে তাহার মাষ্টার লাফ আর ফাল এর ব্যাকরণগত ভুল বোঝাইতেছেন। তাতে মেজাজ কিন্ঞ্চিত আরও চওড়া আরও হইয়া গিয়াছে। অগ্নিবর্ষণ করিয়া বলিলাম,তবে কি জমিদার সেই পানি শুষিয়া খাইয়া রাজ্যদ্ধার করিবে রে হারামজাদা?
না,তা নয়,বলিয়া মিনমিন করিতে করিতে গর্দভ চলিয়া গেলো।
দক্ষিণের শম্ভুনাথ আসিয়া পায়ের কাছে বসিতেই জিজ্ঞেস করিলাম,হ্যাঁ রে ব্যাটা,এবার পানি বাড়িয়া নদীর পাড় যে ধসিয়া যাইতেছে,জগদীশ কি মরিয়াছে? প্রজারা যে ডুবিয়া মরে..!!
শম্ভু কহিলো,কি আর কবো কত্তামশাই,পাড়ের গাছ যে বনবিভাগ কাটিয়া লইয়া গেছে।
-তা কি করিবে সেই গাছ দিয়া? ইংরাজদের পুচ্ছদেশে চিতা জ্বালাইবে?
-পুচ্ছদেশ হবে ক্যান কত্তা,সম্মুখের জন্যই। ব্যাটারা কন্ডোমের কারখানা দিচ্চে।
-তা আমার রাজ্য সাফ করিয়া নিজেদের পয়দা বন্ধ করা কেনো?
এতক্ষণ উকিল চুপ ছিলো। এবার সুযোগ পাইতেই বলিল,এই কন্ডোম-ফন্ডোমের জন্যই দেশটা রসাতলে গেলো। বলি ক্ষেমতা থাকে তো বাংগালের মত গন্ডায় গন্ডায় নিয়ে দেখা? প্রতিপালনের ক্ষেমতা নেই;আসিয়াছিস বাংলা শাসন করতে..!! উজবুকের দল।
মাস্টার আহ্নিকের খাবার গ্রহন করিতে যাওয়ামাত্রই শ্যালিকা আমার ঘরে ঢুকিয়া বলিল,তাই তো বলি বাবুর এত রাগ কেনো..!! মাস্টারতো আমাকে ফাল পাড়াইতে পাড়াইতেই সময় খাইলো।
চিৎকার করিয়া শবনমকে ডাকিয়া বলিলো,বলি হুজুরের জন্য আমোদের ব্যবস্থা করা হউক বৈকালে। তা না হলে মেজাজ নামিবেনা।
জলসাঘরে প্রবেশ করিতেই দেখি নর্তকীদের কলতান। এক বেটি আরেক বেটিকে খোঁচা মেরে বলিলো,বাবুরে দেকেচো? খুশি করলে নজরানা ভারি হবে..!! প্রত্যুত্তরে চোখ রাঙাইয়া তাহার সখী উত্তর দিলো,অা মলো যা..!! মাগীর সঙ দেকো..!! বাবু কি আমার নাগর লো?
বলিয়াই খিক খিক হাসিতে ঘর সরগরম করিয়া ফেলিলো।
ভ্রু কুঁচকাইয়া বলিলাম,সব মাগীকে বিদায় করা হউক। ঘরে বউ থাকিতে বাইরে কিসের আমোদ?
শয্যাগৃহে ঢুকিতেই ছোটগিন্নী বলিল,সাহেব যে আজ বড় উতলা? কি হয়েচে?
-কি আর হবে? ইংরাজ শুওরেরা যে গাছ কাটিয়া নদীর পাড় সাফ করিয়া দিয়াছে। এখন অনাথ সব ডুবে মরে।
-সে তো বুঝি। কিন্ত অবেলায় যে এই ঘরে?
ইতস্তত করিয়া বলিলাম,বাদলা দিন। ইংরাজ শুওর খোসা বানিয়ে আমোদ করে। জমিদার কি ওসব ডরে? গন্ডায় গন্ডায় না হলে জমিদারি খাবে কে?
ছোট গিন্নী আতঙ্কিত হইয়া কহিলো,এভাবে সবাই পুত্তুর জন্মাইতে থাকিলেতো একসময় জমিদারি কেনো,দেশে তিল ধারনের ঠাঁই হবেনা।
কপাট লাগাইতে লাগাইতে বলিলাম,ওসব তত্ত্ব ছাড়ো। জানি ঠাঁই হবে না,কিন্তু বাঙ্গালী শাক দিয়ে মাছ ঢাকেনা।