"তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন,গতকাল আপনার মৃত মেয়েকে স্বপ্নে দেখেছেন?" শুয়োপোঁকাটা ফ্যাঁসফ্যাঁসে গলায় রহমত মিয়া কে জিজ্ঞেস করলো।
"তাইলে কি আমি মিছা কথা কইতাছি? আজিব প্রশ্ন..!!" রহমত মিয়ার সুরে ভয় আর বিরক্তি ঝরে পড়লো। আজ বাদে কাল ঈদ। কি ঝামেলায় পড়া গেলো..!!
এইতো পাঁচ মিনিট আগের কথা।
সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে। রহমত মিয়ার দীর্ঘদিনের অভ্যাস,ক্ষেতের কাজ শেষে বাড়ি ফেরার আগে পাশের জংলামত জায়গায় প্রাকৃতিক কর্ম টা সারা। পেট টা কয়দিন ধরে খারাপ যাচ্ছে। এমনিতে একগাদা প্রক্ষালন বের না হলে রহমত মিয়ার মেজাজ চাঙ্গা হয়না,তার উপর চলছে আমাশয়। স্বাভাবিকভাবেই মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে আছে। ঠিক তখনই পিরিচের মত কি একটা এসে সরাসরি তার ক্ষেতে নামলো।
"হায় হায়,পুরা ক্ষেত নষ্ট কইরালাইলো রে..!!" চিৎকার করতে করতে রহমত মিয়া দৌঁড়ে পিরিচটার সামনে যেতেই হতবাক হয়ে গেলো। ক্ষেতের মাঝে পড়ে আছে এক বিশাল ধাতব টুকরো।
ফুঁস করে একটি শব্দ হতেই সে দেখলো,ধাতব যন্ত্রটার উপরের একটা অংশ খুলে গেলো আর বিশালাকার চারটে শুয়োপোঁকার মত প্রাণী বের হয়ে আসলো। রহমত মিয়ার মুখ বিষ্ময়ে হা হয়ে গেলো।
শুয়োপোঁকাগুলো মাটিতে বুক ঘষতে ঘষতে তার সামনে এসে দাঁড়ালো। দ্রুত সন্ধ্যা নেমে আসছে। রহমত মিয়া আশেপাশে একজন জনমানুষের চিহ্নও খুঁজে পেলো না। এ সাক্ষাত জ্বীন-ভূতের কারবার। রহমত মিয়া জানে,জ্বীনেরা অনেক রূপ ধরে মানুষের সামনে আসে। এ জিনিসগুলা জ্বীন না হয়েই যায় না..!!
হঠাৎ একটা শুয়োপোঁকা ফ্যাঁসফ্যাঁসে গলায় কথা বলে উঠলো,
-কেমন আছেন রহমত সাহেব?
বিষ্ময়ের ঘোর তখনও কাটেনি রহমত মিয়ার। অস্ফুট স্বরে বলে উঠলেন,
- আরি..!! পোকায় দেহি আবার কথা কয়..!!
- আমরা পোকা নই রহমত সাহেব। আমরা নুৎসু।
- কিহ? খুৎসু? জ্বীনেগো নাম সন্দেহ করি। পরশুদিন গয়রা কবিরাজ খুৎসু না ফুৎসু নামের এক জ্বীনরে বোতলে হান্দাইছিলো। আপনেরা কি তার গুষ্টির?
- জ্বী না,আমরা নুৎসু। আপনারা যেমন মানুষ,আমরা তেমন খুৎসু। আপনাদের ভাষায় আমরা এলিয়েন।
- কি কন এইগুলা? এলিয়েন ফেলিয়েন..!! আপনেরা কইত্থেইকা আইছেন?
- এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি থেকে। আমরা যেই গ্রহে বাস করি তার নাম কিউকাম্বার।
রহমত মিয়া চোখ কুঁচকে গলাটা উঁচু করে বললো,
- ফাইযলামি করেন? আমারে মূরুক্ষ পাইছেন? আমি কেলাশ এইট পাশ। কিউকাম্বার মানে শশা। আপনেগো গ্রহের নাম শশা? যাউকগা,আমার ধারে কেল্লিগা আইছেন?
রহমত মিয়ার আতঙ্ক আর ভয় দুটোই অনেকটা কমে এসেছে। জ্বীন-ফীন জীবনে বহুবার দেখেছেন। কালা বৈদ্দ্যের সাথে দুই বছর ছিলেনও। ভয় তাই সওয়া আছে।
- আমরা পৃথিবীতে এসেছি এক অতিপ্রাকৃত জিনিসের গবেষণায়। মানুষ স্বপ্ন দেখে। নুৎসু রা স্বপ্ন দেখেনা। দয়া করে স্বপ্ন জিনিস টা কি ব্যাখ্যা করবেন?
- স্বপ্ন? মানে খোয়াব? কইতে পারিনা তো। ঘুমাইলে স্বপন দেহি।
- কি দেখেন স্বপ্নে?
- কত কিছুই তো দেহি। কয়ডা মনে থাহে আবার অনেকগুলা থাহে না।
- শেষ কবে স্বপ্ন দেখেছিলেন?
- গতকাইল রাইতে।
- কি দেখেছিলেন?
- ছোডো মাইয়াডারে দেখছি। দেহি সন্ধ্যায় গফুরের ক্ষেতের মাঝখান দিয়া যাইতাছি,মানিক আমার পিছন থেইক্যা বাপজান কইয়া ডাক দিলো,তারপর দৌঁড়াইয়া আইসা কোলে উঠলো।
একটু নিঃশ্বাস নিয়ে আবার বলতে লাগলো রহমত মিয়া,
-মাইয়াডার নাম আছিলো পরীবানু। পরীর মত দেখতে। চাইর বছর থাকতে নিউমোনিয়ায় মইরা গেলো..
বলতে বলতে চোখ ভিজে উঠলো রহমত মিয়ার।
- এইটুকুই?
- হ। এইডুকুই। দেহেন,আন্ধার হইয়া গেছে। ইদের চাঁন উঠছে। ওই দেহেন। বাড়িত যাওন লাগবো। ইদের বাজার করতে অইবো। ছাড়ান দেন।
- শেষ প্রশ্ন রহমত সাহেব। স্বপ্ন কি সত্যি হয়?
- আজিব প্রশ্ন..!! আমি কি পীর-আউলিয়া নাহি যে স্বপ্ন সত্যি অইবো? ছাড়ান দেন তো।
- আচ্ছা,আমরা চলে যাচ্ছি। আপনার কাছ থেকে যথেষ্ঠ তথ্য পেলাম না। তবে আমরা স্বপ্ন না দেখলেও মানুষের স্বপ্নে দেখা জিনিস বাস্তবে ঘটাতে পারি। আপনি চাইলে আপনার মৃত মেয়েকে আবার জীবতবস্থায় এনে দিতে পারি।
- কি কন..!! ক্যামনে?
- মহাবিশ্বের অপার্থিব জিনিসগুলো চতুর্মাত্রিক আর পন্ঞমাত্রিক জগতে থাকে। আমরা সেসব জিনিস সংকুচিত করে ত্রিমাত্রিক জগতে আনতে পারি।
রহমত মিয়া বিরক্তির সুরে বললো,
- কি কয় এইসব,কিছুই বুঝি না। ধুরো..!! দূর হন তো। আইছে আমার ইছা নবী..!!
হঠাৎ রহমত মিয়া দেখলো তার সামনে কেউ নেই। খানিকটা এদিক-ওদিক তাকিয়ে আইল ধরে হাঁটা শুরু করে বিড়বিড় করে বললো,
"যত্তোসব জিন-ভুতের কারবার। মাইয়ারে নাকি জ্যাতা আইন্না দিবো। যত্তোসব।"
গফুরের ক্ষেতের মাঝে আসতেই আকাশে ইয়া বড় ঈদের চাঁদটা রহমত মিয়ার চোখে পড়লো। পরীবানু বেঁচে থাকতে ঈদের চাঁদ দেখলেই খুশিতে লাফ দিয়ে বাপের কোলে চড়ে বসতো। ভাবতেই চোখজোড়া আবার ভিজে উঠলো।
ঈদের চাঁদের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতেই রহমত মিয়া হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো। পেছন থেকে কে যেন "বাপজান" বলে ডাক দিলো।
গলাটা একদম পরীবানুর মত ।
Dst awesome
ReplyDeleteঅসংখ্য ধন্যবাদ দোস্ত। <3
ReplyDeleteব্লগের বাকী গল্পগুলোও পড়তে পারিস। আশা করি ভালো লাগবে।
ReplyDelete