ডাক্তরের বিবাহ!!


অতঃপর বগার মা চিৎকার করিয়া কাঁদিয়া উঠিয়া বলিল,
- না, না, না... ইহা হইতে পারে না। তুমি আমাদিগকে ছাড়িয়া কোথায় যাইবা বগার বাপ? তুমি চলিয়া গেলে আমি কিবা করিয়া বাঁচিবো? আমাদের বগার কি হইবে?

কাতর নয়নে রোমিও বলিল,
- কিছুই করার নাই জুলিয়েট। FCPS করিতে মোকে শহরে যাইতেই হইবে। হুদা MBBS লইয়া তো আর আজীবন ত্যানা প্যাচাঁইতে পারি না। মোকে বড় ডাক্তর হইতেই হইবেক।

- তবে কেনো আসিয়াছিলা মোর জীবনে যদি চলিয়াই যাইবা? সোয়ামীর মাত্র এক বছরের সোহাগই কি লেখা ছিল মোর কপালে?

কপাল কুঁচকাইয়া বগার বাপ রোমিও বলিল,
- জন্মের পূর্বে বড়ই সাধ করিয়া সিদ্ধান্ত লইয়াছিলাম, MBBS এর ৬ বছরের মাথায় পাশ করিয়া বের হবা মাত্রই বিবাহ করিবো। আমি কি করিবো বগার মা; তুমিই বলো?যৌবন থেইক্যা তো আর একটা বছর এমনি এমনি হারায়া যাইতে দেওয়া যায় না। এক বৎসরে ১৮২খানা ডোজ মিস হইলে বৃদ্ধ বয়সে আপসোস করিয়া মরিতে হইবে।

চোখের জলে লিপিস্টিক নস্ট করিয়া জুলিয়েট বলিল,
- আমি একা বাঁচিবো কি করিয়া বগার বাপ?

-‌ বাঁচিতে হইবে বগার মা। তোমাকে আমি অতিশয় ভালোবাসি। কতটা ভালোবাসি তুমি জানো না। শাহজাহান যেমন ভালবাসিয়া তাজমহল গড়িয়াছিলো মমতাজের মৃত্যুর পর, তদ্রূপ আমিও তোমার জইন্য মহল গড়িবো ‘বগার মা হাসপাতাল’ নামে। সেখানে ICU তোমাকে দিয়েই উদ্বোধন করিবো।

উল্লসিত হইয়া জুলিয়েট বলিল,
- সত্যি বেইবি?

- অবশ্যই বেবি,‌ তোমার নামে আমি আরো স্হাপত্য নিদর্শন বানাইবো। ‘হারামি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি’ তৈয়ার করিবো। দেশ ও দশের মাঝে তুমি স্মরণীয় হইয়া থাকিবা। এইসবের জইন্য আমাকে শহরে যাইতেই হইবে গো।

- কিন্তু আমি একা হাতে বগা কে কি করিয়া মানুষ করিবো?

রোমিও উত্তর দিলো,
- আমি কালে ভদ্রে তোমাকে পয়সা পাঠাইবো। তুমি তাহা দিয়া বগাকে সুশিক্ষিত করিয়া তুলিবে। ওকে আমার চেয়েও বড় ডাক্তর বানাইতে হইবে।

- তাহা না হয় হইলো, কিন্তু তোমাকে কি আর আমি দেখিতে পাইবো না?

- পাইবে তো। ভিডিও কল করিলেই দেখিতে পাইবে। সকাল ১০টা থেইক্যা পরেরদিন সকাল ৯.৫৯পর্যন্ত ছাড়া অন্য যে কোনো সময় কল করিলেই ধরিবো।

- ইহা কি বলিলা..!!! আমিতো মুপাইলই চালাইতে পারি না। গেরামের মেয়ে, আমি কম্পিউটার দিয়া ইমেইল পাঠাইবো তোমায়। তুমি আমায় ইমেইল এই উত্তর দিও। আর বাসায় আসিবা কবে কবে?

- প্রতিবার ফেব্রুয়ারির ২৯ তারিখে বাড়ি আসিয়া তোমাদিগকে দেখিয়া যাইবো বগার মা।

ইহা শুনিয়া বগার মা মাথা চক্কর দিয়া,হেঁচকি তুলিয়া,টাসকি খাইয়া দাঁত কপাটি লাগিয়া,উল্টাইয়া পড়িয়া গিয়া ফিট হইয়া গেলো। 

“বগার মা......!!!”-বলিয়া রোমিও যখন তাহাকে তুলিতে গেলো, ঘড়িতে দেখিলো তাহার ফ্লাইটের সময় হইয়া গিয়াছে। সে জানে, জুলিয়েটের জ্ঞান ১০ মিনিট পরেই ফিরিবে। এখন তাহার জ্ঞান ফিরাইতে গিয়া ৫ মিনিট নষ্ট করার মানে নাই। 

২ মাস বয়সের বগা তখন দোলনায় পা ঝুলাইয়া ফিটার খাইতেছিলো। এখনকার দিনের বাচ্চা। হাইব্রীড টাইপ, বড়ই এ্যাডভান্স। ৬ মাসের আগেই পোলাও মাংস খাইতে পারে। ভেজা চোখে রোমিও বগার হাতে একখান ক্রেডিট কার্ড দিয়া বলিল,
- বড় হইয়া এইটা দিয়া চকোলেট খাইস বাপ... আমি চলিলাম।

মুখ থেকে ফিটার সরাইয়া বগা বলিয়া উঠিলো,
- পাসওয়ার্ডটা কইয়া যাও ড্যাডি?

রোমিওর মুখখানা আন্ধার হইয়া গেলো। বহুত কষ্টে বলিলো,
- ওয়ান ফোর খাড়া টু উল্টা টু জিরো জিরো জিরো।

- ওকে ড্যাডি, আর শুনো, শহরে গিয়া আমার লাইগ্যা কনডেন্সড মিল্ক পাঠাইয়ো। চা খামু।

“ঠিকাছে আব্বাজান..”, এই বলিয়া খ্যাতা বালিশ লইয়া রোমিও দ্রুত ঘর হইতে বের হইয়া গেলো। সময় খুব কম। গ্রামের এয়ারপোর্ট। উড়োজাহাজ ল্যান্ড করিলে টেক অফ করিতে পারে না।

No comments:

Post a Comment