কল্পান্ত্রিক..!


০৮/১২/২০১৫
চন্দ্রালোকিত রাতে চাঁদটার পাশে যখন এক টুকরো সাদা মেঘ ঘোরাফেরা করে, ঠিক তখনই অন্ধকার বদ্ধ ঘরের জানালায় ঠিকরে এসে পড়া চাঁদের আলোয় বৃত্তের মাঝে বসে অভ্র পুতুলের মুখে সুঁচ ফোটায়। নারকেল গাছের ঝিরিঝিরি পাতায় কেটে যাওয়া আলো ছায়ার খেলায় একটা অশরীরীর উপস্থিতি টের পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। পারতপক্ষে, অশরীরী সহজে ধরা দেয় না। এক বছর আগে ঠিক আজকের দিনটাতেই অজানা চাহনীতে পাগল হয়েছিলো অভ্র। কলেজ করিডোরে প্রথম দেখা অদ্রির সাথে। এক ঝলক দেখাতেই প্রেমে পড়া, তবে দেহসৌন্দর্যে নয়। অদ্রির একটি জিনিসের প্রেমেই শুধু পড়েছে অভ্র। ওটাই তার চাই। আর কিছু নয়।
০২/০১/২০১৬
- হ্যালো অভ্র, শুনতে পাচ্ছো? আমি জোরে কথা বলতে পারবো না। বাবা মা বাসায়।
- হুম, শুনতে পাচ্ছি। আচ্ছা, তুমি কি আজ নীল জামা পড়েছো?
- হ্যাঁ, কিভাবে বুঝলে?
- ভালোবাসি, তাই টের পাই। বাম কানের দুলটা খুলে পড়ছে তোমার। ঠিক করে লাগিয়ে নাও।
- আশ্চর্য, সত্যিই তো। এই, সত্যি করে বলো তো, তুমি কিভাবে টের পাচ্ছো?
- আমার সিক্সথ সেন্স অনেক প্রবল। বুঝলা?
- হুম, বুঝলাম তো। ভালোবাসা এতই বেশি যে ওপাশ থেকেও টের পাও। আজীবন আমাকে ধরে রাখতে পারলেই হতো।
- যা ভালোবাসি, তাই ধরে রাখতে পারবো।
- বুঝলাম না। আচ্ছা, বাদ দাও। শোনো, কাল গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
- আচ্ছা, ঠিকা আছে।
প্রতিটা রাত অভ্রের এখন নেশার ঘোরে কাটে। ঘরের বাইরে আরেকটা অস্তিত্ব ওকে উৎসাহ দেয়। মাথাটা ঝিমঝিম করে। আজ আকাশটা মেঘে ঢাকা। ঘরে গাঢ় অন্ধকার।
ইলেক্ট্রিসিটি ফেইল করেছে, ফোনেও ব্যালেন্স নেই। নাহলে অদ্রিকে ফোন দিয়ে সময়টা পার করা যেতো। মেয়েটা যেন আজকাল কেমন দূরে সরে থাকে।

পরদিন, ০৩/০১/২০১৬
অদ্রির মুখোমুখি দাড়িয়ে অভ্র।
- দেখো অভ্র, রিলেশনশিপটা কনটিনিউ করা আমার পক্ষে সম্ভব না।
- কেনো? জানতে পারি?
- কারণটা তুমিও জানো অভ্র। সবাই তোমাকে সাইকো ভাবে। আমি আগে ভাবতাম, সবাই ভুল ভাবে। কিন্তু তোমার আচার আচরণে ব্যাপারটা এখন পরিস্কার। এভাবে আসলে দিন যায় না অভ্র। তুমি আমায় ভুলে যাও। আর কখনো আমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করবে না। ভালো থেকো।
অদ্রির চলে যাওয়ার সময় হাই হিলের খটখট শব্দটা যখন কানে বাজছিলো, ঠিক তখনই ছলছল চোখের নিচেই নিজের বাঁকা হাসির উপস্থিতিটা টের পেল অভ্র। নিজে নিজেই ভাবলো, “আমি আসলেই একটা সাইকো।”
১৩/০৫/২০১৬
চাঁদটা বেশ বড় আজ। ঘড়িতে সময় দুটো বাজতে দুই মিনিট বাকী। প্রেম উত্তেজনার জন্য শ্রেষ্ঠ পরিবেশ। অদ্রির ফোনে কল দিতে দিতে হাত ব্যথা হয়ে গিয়েছে জাফিরের। কে জানে, হয়তো চোখের ব্যাথায় ছটফট করছে মেয়েটা। গত এক মাস ধরে ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে সমস্যাটা।
০২/০৮/২০১৬
দুটো বাজার ঠিক দুটো ঢং ঢং আওয়াজ টা অভ্রর মনে শিহরন বইয়ে দিলো। মুচকি হাসিটা গাঢ় হয়ে উঠলো। চাঁদের আলোটা এখন সরাসরি ওর গায়ের উপর। ধূপ ধুনোর ধোঁয়া, গন্ধ দুটোই মিলিয়ে যাচ্ছে ক্রমান্বয়ে। বাম হাতে রাখা পুতুলটার চোখে সূচ ফোটানো বন্ধ করলো ও। হাতে উঠে এলো বিচিত্র নকশা অঙ্কিত ড্যাগার নামধারী একটা ছোরা। নিজের জিহ্বাটা বের করে ছুরিটা দিয়ে হ্যাঁচকা টান দিলো ও। ছিটকে কিছুটা রক্ত পুতুলের গায়ে পড়লো। অট্টহাসি দিয়ে পুতুলের দিকে ছুরিটা বাড়ালো আস্তে আস্তে।
পরদিন, ০৩/০৮/২০১৬
পোস্ট-মর্টেম রিপোর্টটা জাফিরের সামনেই অদ্রির বাবার হাতে দিলেন পুলিশ অফিসার। রিপোর্ট, সুইসাইড কেস। প্রবল মানসিক সমস্যায় উত্তেজিত হয়ে নিজের চোখ উপড়ে ফেলা ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ মৃত্যুর জন্য দায়ী।
জাফিরের মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। দুইমাস আগের একটা মেসেজ ওপেন করলো মোবাইলে। অদ্রির মেসেজ ছিলো, “কিভাবে অভ্রের সাথে রিলেশন রাখবো বলো? ছেলেটা পুরাই সাইকো। ও নাকি আমার চোখের সাথে প্রেম করতে চায়। আমার সাথে নয়। আমার চোখ দুটো নাকি দুনিয়ার সেরা সৌন্দর্য। আজব না? ছাগল একটা।”
জাফিরের চোখ দুটো ছোট হয়ে আসে। অঙ্কটা মিলছে না। দৌঁড়োতে শুরু করলো ও। ইলেক্ট্রিসিটি ফেইল করেছে মাত্র। আকাশের দিকে তাকালো ও। চাঁদটা মাঝ আকাশে এখন।
রুমের দরজাটা প্রচন্ড ধাক্কায় খুলে গেলো। ঘাড় ঘুরিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো অভ্র।  হাঁপাতে হাঁপাতে ভেতরে প্রবেশ করে ওর দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকালো জাফির।
দেয়ালঘড়িতে ঢং ঢং করে রাত দুটোর ঘন্টাধ্বনি বাজলো।
টেবিলের উপর রাখা মোমবাতির আলোয় অভ্রের মুখে এক চিলতে হাসিটা ভয়ংকর লাগছে। কোমল স্বরে বললো, “যা ভালোবাসি শুধু তাইই রেখেছি। বেশি কিছু না।”
টেবিলের উপর তাকিয়েই জাফিরের মুখ থেকে রক্ত সরে গেলো। ফ্যাকাশে মুখে একটা জিনিসেই নজর পড়লো ওর। মোমবাতির পাশেই বয়ামে যত্ন করে রাখা; খুবলে তুলে ফেলা এক জোড়া চোখ।
___________________________________
Speciality: 50% of the story based on true incidence.

No comments:

Post a Comment