নিঃশর্তে ভালোবাসি


- প্রতিদিন আমার জন্য এখানে দাঁড়াবা, বুঝছো?

- জ্বী।

- আর হ্যাবলার মতো তাকায়া থাকবা না আমার দিকে, অসহ্য লাগে। স্মার্ট হতে চেষ্টা করো; বুঝছো?

- জ্বী, বুঝেছি।

- কী সেই কখন থেকেই জ্বী জ্বী করতাছো? গাধা কোথাকার!! রিক্সা ডাকো।

বেশ ঝাঁঝের সাথেই কথাটা বললো ইভা। মৃদু মাথা ঝাঁকিয়ে রায়হান একটা রিক্সা ডাকলো। দুজনেই রিক্সায় উঠে‌ বসলো। উদ্দেশ্য প্রথমে ইভাকে সায়েন্স ল্যাবে নামিয়ে দেয়ার পর রায়হান মেডিকেলে নামবে। তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও।
সায়েন্স ল্যাবের সামনে এসে নামার সময় ইভা কটমটিয়ে রায়হানের দিকে তাকিয়ে বললো, “যতগুলো শর্ত দিয়েছি সকাল থেকে মনে থাকবে তো?”

নিচু গলায় রায়হান বললো, “আশা করি... মানে জ্বী... মানে হ্যাঁ, অবশ্যই।”

- গুড, আজ সন্ধ্যায় ফোন দেয়ার দরকার নেই; আমার রাগ না কমা পর্যন্ত কথা বলতে চেষ্টা করবা না আমার সাথে। রাগ কমলে আমিই ফোন দিব। যাও এখন।

“আচ্ছা..”, বলে রায়হান রিক্সাওয়ালাকে সামনে বাড়তে বললো। উপরে উপরে যতই রাগ দেখাক, ছেলেটার প্রতি গভীর টান অনুভব করে ইভা। এমন শান্ত ছেলে আজকের দিনে পাওয়া দুষ্কর। রায়হান দেখতে দারুণ কিন্তু অত্যধিক শান্ত হওয়ায় বোকা টাইপের মনে হয়। ধমক দিয়ে বারবার স্মার্ট হতে বললেও ইভা মনে মনে চায় ও সারাজীবন এমন বোকাই থাকুক।

বিকেল দিকে আকাশ প্রচন্ড মেঘলা হয়ে এলো কালো মেঘে। জোর বাতাস বইছে। কিন্তু বৃষ্টির আগেই ইভা বাসায় পৌঁছে গেল। সন্ধ্যার দিকে তুমুল বৃষ্টি। সেই সাথে ঝড়ো হাওয়া। রাত ৯টা বেজে গেল। রায়হানকে সে ফোন করতে না করেছে সত্যি কিন্তু এই মূহুর্তে চিন্তা হচ্ছে ওর জন্য। কয়েকবার রায়হানকে ফোনে ট্রাই করলো, সুইচড অফ। ছুড়ে ফোনটা বিছানায় ফেললো।

রাত একটা পঁচিশ; ঘুম আসছে না ওর। বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে, হয়তো বা হিমেল হাওয়ায় ভাল লাগবে মনে করে ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়ালো ইভা। হঠাৎ লনের দিকে চোখ পড়তেই ও দেখলো কেউ একজন দাড়িয়ে আছে। একটা ছেলে; ওর দিকে তাকিয়েই হাত নাড়ছে!

তখনই বজ্রপাতের আলোয় রায়হানকে চিনতে পারলো ও। বৃষ্টিতে ভিজে একেবারে জুবুথুবু হয়ে গেছে!

দৌড়ে নিচে নেমে এলো ইভা। রায়হানের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো ও। কিছু না বলে রায়হান একগুচ্ছ সাদা গোলাপ বাড়িয়ে দিলো ইভার দিকে।
- শুভ জন্মদিন।

প্রচন্ড অবাক হয়ে গেছে ইভা। ওর মুখ দিয়ে কথা বেরোচ্ছে না। ফুলগুলো হাতে নিয়ে কি বলবে ভেবে না পেয়ে বললো,
- এই ঝড় বৃষ্টিতে এসবের মানে কি রায়হান?

- না, মানে... তোমার জন্মদিন তো... তাই ভাবলাম..

হেসে উঠলো ইভা, “তুমি সত্যিই একটা পাগল, না না গাধা। কতক্ষণ ধরে দাড়িয়ে আছো এখানে?”

- দেড় ঘন্টার মত হবে।

- বাসায় যাও এখন।

- এখনই?

- তাহলে কখন? বৃষ্টিতে ভিজবো নাকি সারারাত? আব্বু জেগে উঠলে সমস্যা। বাসায় যাও।

- আচ্ছা, যাই তাহলে।

হাঁটা ধরেও আবার ফিরে আসলো ও। মিনমিনিয়ে বললো, “একটা কথা....”

- কি?

- রাগ কমেছে?

ইভা মুচকি হেসে বললো, “চুপচাপ বাসায় যাও।”

“আচ্ছা..”, বলে রায়হান ফেরার পথ ধরলো। যতক্ষণ পর্যন্ত ওকে দেখা গেলো ইভা এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়েই রইলো। তারপর নিজের ঘরে ফিরে এসে জামা পাল্টে নিলো ইভা। বিছানায় এসে ফুলগুলো হাতে নিলো ও। বৃষ্টিতে একটানা ভিজে সাদা গোলাপগুলো আরো কোমল ও জীবন্ত হয়ে উঠেছে যেন, হালকা মিষ্টি একটা গন্ধও ছড়াচ্ছে। কি মনে করে যেন ফুলগুলোকে বুকে চেপে ধরলো ও; ওর চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। ইভা কাঁদছে। কেন জানি মনে হচ্ছে রায়হানকে ছাড়া বাঁচা ওর পক্ষে অসম্ভব।
.
.
.
আজ রায়হানকে দেখা গেলো একদম রিক্সা রেডি করে দাড়িয়ে আছে। ওর মুখে সেই চিরচেনা এক চিলতে হাসি। ওর হাসি দেখে ইভাও মুচকি না হেসে পারলো না। রিক্সায় উঠে বসলো দুজনেই। কথা বলার এক পর্যায়ে ইভা লক্ষ্য করলো রায়হানের গায়ে খুব জ্বর আর ওর ডান হাতের কনুইয়ের উপর শার্টের হাতা রক্তের লাল রংয়ে ভেজা।

‘কি হয়েছে..’ -জিজ্ঞেস করতেই রায়হান এড়িয়ে গেলো। জ্বরটা বৃষ্টিতে ভেজার ফলেই হয়েছে, তা জানে ইভা। অনেকটা জোড় করেই ওর শার্টের হাতা উঠালো ইভা। কনুইয়ের উপরের অংশটা খুব খারাপভাবেই ছড়ে গেছে। কটমটিয়ে চাইতেই রায়হান নিচু স্বরে বললো, “না,মানে.. কাল তোমাদের দেয়াল টপকাতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম। বেশি লাগেনি তো।”

- চুপ কর তুমি। রিক্সা ঘোরাতে বল।

- কোথায় যাবে? ক্লাস করবে না আজ?

- আমি রিক্সা ঘোরাতে বলেছি।

অগত্যা ঘোরাতেই হলো। রিক্সা থেকে নেমে রেললাইনের ধার দিয়ে হাঁটতে লাগলো ওরা। রায়হান খেয়াল করলো ইভার গাল বেয়ে পানির ধারা নামছে। নিঃশব্দে কাঁদছে ও। কি হয়েছে বারবার জিজ্ঞেস করেও উত্তর পেলো না রায়হান।

একটু পর ইভা জিজ্ঞেস করলো, “কাল সন্ধ্যা থেকে তোমার ফোন বন্ধ ছিলো কেন? কোথায় ছিলো ফোন?”

- পকেটেই ছিলো। বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে ফোনটা।

- সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টিতে ভেজার কারণ?

- সাদা গোলাপ খুঁজে পাচ্ছিলাম না....‌ তাই আর কি...

- যদি কাল ব্যালকনিতে না আসতাম কি করতে?

- ভোর অবধি অপেক্ষা করতাম।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে ইভা বলে উঠলো, “রায়হান...”

- হুম, বলো?

- কতটা ভালবাসো আমায়?

- আমার পক্ষে যতটা সম্ভব।

- কেমন ভালোবাসো?

মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে রায়হান উত্তর দিলো, “নিঃশর্তে ভালবাসি।”

হঠাৎ ইভা ওর কাধেঁ হেঁচকা টান অনুভব করলো। একটা লোক ওর ভ্যানিটিব্যাগ টান দিয়ে রেললাইনের উপর দিয়েই দৌড় দিলো সামনের দিকে।

“আমার ব্যাগ...!!!”, চেঁচিয়ে উঠলো ও।

ইভাকে ‘দাঁড়াও’ বলে রায়হানও দৌড়ে লোকটার পিছু নিলো। বেশ খানিকটা দূরে গিয়েই লোকটাকে ধরে ফেললো ও। শুরু হলো ধ্বস্তাধ্বস্তি। অনেকটা দূর থেকেই ইভা চেচাচ্ছে, “কেউ আছেন? সাহায্য করুন,কেউ আছেন?”

চারদিকে কেউ নেই। তীক্ষ্ম বাঁশির শব্দে পেছনে তাকিয়ে ইভা শুধু দেখতে পেলো দূর থেকে ট্রেন আসছে। চেঁচিয়ে ইভা বললো, “রায়হান, ছেড়ে দাও, ট্রেন আসছে।”

কিন্তু ওর গলার স্বর এতদূর অবধি পৌঁছোলো না।

ধ্বস্তাধ্বস্তির এক পর্যায়ে রায়হান ওর দেহে প্রচন্ড জ্বালা অনুভব করলো। লোকটা ওর বুক ও পেটে ছুরি চালিয়েছে।

তীব্র যন্ত্রনায় রেললাইনের উপর লুটিয়ে পড়লো ও। লোকটা এই সুযোগে ছুট দিলো। রায়হান ঝাপসা চোখে দেখতে
পেলো অনেক দূর থেকে ইভা ওকে রেললাইন থেকে সরে যেতে বলছে।

কিন্তু রায়হানের এখন সেই শক্তিও নেই।

সব ঝাপসা হয়ে আসছে। ইভা প্রাণপনে দৌড় দিলো রায়হানের দিকে। ট্রেন কাছে চলে এসেছে। আরো জোরে ছুটলো ও। ট্রেন আরো কাছে এসে পড়েছে। ঘন ঘন হুইসেল শুনতে পাচ্ছে ও। সর্বশক্তি দিয়ে দৌড় দিলো ইভা, আর চেঁচিয়ে রায়হানকে সরতে বলছে। হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল ইভা। ও দেখলো ট্রেন ওর পাশ দিয়ে ওকে অতিক্রম করে রায়হানের দিকে ছুটে চলেছে। প্রচন্ড জোরে চিৎকার করে উঠলো ইভা। ট্রেন চলে যাওয়ার পর,জ্ঞান হারানোর আগ মূহুর্তে ও শুধু রায়হানের গলা থেকে হাঁটু পর্যন্ত দেহটা দেখতে পেলো রেললাইনের উপর।
.
.
.
বারো মাস পেরিয়ে গেছে। আজ ইভার জন্মদিন।

মানসিক হাসপাতালের নিজের রুমের ঘড়িতে রাত একটা পঁচিশ দেখতে পেলো ইভা। রায়হানের স্টেথিস্কোপটা ওর কাছে রয়ে গেছে।

মুচকি হাসি দিয়ে ইভা কানে দিল সেটা। ও শুনতে পেলো কে যেন বহুদূর থেকে ফিসফিসিয়ে বলছে, “নিঃশর্তে ভালোবাসি..।”

প্রকাশিত হয়েছিলো: ভালোবাসার গল্প গ্রুপে

ডাক্তরের বিবাহ!!


অতঃপর বগার মা চিৎকার করিয়া কাঁদিয়া উঠিয়া বলিল,
- না, না, না... ইহা হইতে পারে না। তুমি আমাদিগকে ছাড়িয়া কোথায় যাইবা বগার বাপ? তুমি চলিয়া গেলে আমি কিবা করিয়া বাঁচিবো? আমাদের বগার কি হইবে?

কাতর নয়নে রোমিও বলিল,
- কিছুই করার নাই জুলিয়েট। FCPS করিতে মোকে শহরে যাইতেই হইবে। হুদা MBBS লইয়া তো আর আজীবন ত্যানা প্যাচাঁইতে পারি না। মোকে বড় ডাক্তর হইতেই হইবেক।

- তবে কেনো আসিয়াছিলা মোর জীবনে যদি চলিয়াই যাইবা? সোয়ামীর মাত্র এক বছরের সোহাগই কি লেখা ছিল মোর কপালে?

কপাল কুঁচকাইয়া বগার বাপ রোমিও বলিল,
- জন্মের পূর্বে বড়ই সাধ করিয়া সিদ্ধান্ত লইয়াছিলাম, MBBS এর ৬ বছরের মাথায় পাশ করিয়া বের হবা মাত্রই বিবাহ করিবো। আমি কি করিবো বগার মা; তুমিই বলো?যৌবন থেইক্যা তো আর একটা বছর এমনি এমনি হারায়া যাইতে দেওয়া যায় না। এক বৎসরে ১৮২খানা ডোজ মিস হইলে বৃদ্ধ বয়সে আপসোস করিয়া মরিতে হইবে।

চোখের জলে লিপিস্টিক নস্ট করিয়া জুলিয়েট বলিল,
- আমি একা বাঁচিবো কি করিয়া বগার বাপ?

-‌ বাঁচিতে হইবে বগার মা। তোমাকে আমি অতিশয় ভালোবাসি। কতটা ভালোবাসি তুমি জানো না। শাহজাহান যেমন ভালবাসিয়া তাজমহল গড়িয়াছিলো মমতাজের মৃত্যুর পর, তদ্রূপ আমিও তোমার জইন্য মহল গড়িবো ‘বগার মা হাসপাতাল’ নামে। সেখানে ICU তোমাকে দিয়েই উদ্বোধন করিবো।

উল্লসিত হইয়া জুলিয়েট বলিল,
- সত্যি বেইবি?

- অবশ্যই বেবি,‌ তোমার নামে আমি আরো স্হাপত্য নিদর্শন বানাইবো। ‘হারামি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি’ তৈয়ার করিবো। দেশ ও দশের মাঝে তুমি স্মরণীয় হইয়া থাকিবা। এইসবের জইন্য আমাকে শহরে যাইতেই হইবে গো।

- কিন্তু আমি একা হাতে বগা কে কি করিয়া মানুষ করিবো?

রোমিও উত্তর দিলো,
- আমি কালে ভদ্রে তোমাকে পয়সা পাঠাইবো। তুমি তাহা দিয়া বগাকে সুশিক্ষিত করিয়া তুলিবে। ওকে আমার চেয়েও বড় ডাক্তর বানাইতে হইবে।

- তাহা না হয় হইলো, কিন্তু তোমাকে কি আর আমি দেখিতে পাইবো না?

- পাইবে তো। ভিডিও কল করিলেই দেখিতে পাইবে। সকাল ১০টা থেইক্যা পরেরদিন সকাল ৯.৫৯পর্যন্ত ছাড়া অন্য যে কোনো সময় কল করিলেই ধরিবো।

- ইহা কি বলিলা..!!! আমিতো মুপাইলই চালাইতে পারি না। গেরামের মেয়ে, আমি কম্পিউটার দিয়া ইমেইল পাঠাইবো তোমায়। তুমি আমায় ইমেইল এই উত্তর দিও। আর বাসায় আসিবা কবে কবে?

- প্রতিবার ফেব্রুয়ারির ২৯ তারিখে বাড়ি আসিয়া তোমাদিগকে দেখিয়া যাইবো বগার মা।

ইহা শুনিয়া বগার মা মাথা চক্কর দিয়া,হেঁচকি তুলিয়া,টাসকি খাইয়া দাঁত কপাটি লাগিয়া,উল্টাইয়া পড়িয়া গিয়া ফিট হইয়া গেলো। 

“বগার মা......!!!”-বলিয়া রোমিও যখন তাহাকে তুলিতে গেলো, ঘড়িতে দেখিলো তাহার ফ্লাইটের সময় হইয়া গিয়াছে। সে জানে, জুলিয়েটের জ্ঞান ১০ মিনিট পরেই ফিরিবে। এখন তাহার জ্ঞান ফিরাইতে গিয়া ৫ মিনিট নষ্ট করার মানে নাই। 

২ মাস বয়সের বগা তখন দোলনায় পা ঝুলাইয়া ফিটার খাইতেছিলো। এখনকার দিনের বাচ্চা। হাইব্রীড টাইপ, বড়ই এ্যাডভান্স। ৬ মাসের আগেই পোলাও মাংস খাইতে পারে। ভেজা চোখে রোমিও বগার হাতে একখান ক্রেডিট কার্ড দিয়া বলিল,
- বড় হইয়া এইটা দিয়া চকোলেট খাইস বাপ... আমি চলিলাম।

মুখ থেকে ফিটার সরাইয়া বগা বলিয়া উঠিলো,
- পাসওয়ার্ডটা কইয়া যাও ড্যাডি?

রোমিওর মুখখানা আন্ধার হইয়া গেলো। বহুত কষ্টে বলিলো,
- ওয়ান ফোর খাড়া টু উল্টা টু জিরো জিরো জিরো।

- ওকে ড্যাডি, আর শুনো, শহরে গিয়া আমার লাইগ্যা কনডেন্সড মিল্ক পাঠাইয়ো। চা খামু।

“ঠিকাছে আব্বাজান..”, এই বলিয়া খ্যাতা বালিশ লইয়া রোমিও দ্রুত ঘর হইতে বের হইয়া গেলো। সময় খুব কম। গ্রামের এয়ারপোর্ট। উড়োজাহাজ ল্যান্ড করিলে টেক অফ করিতে পারে না।

আত্মাখোর!


লোকটার সাথে দেখা হয়েছিলো দার্জিলিংয়ে। গ্রীষ্মের ছুটিতে শীতের ঝাপটা খেতে সোজা চলে গিয়েছিলাম খালার বাসায়। খালার বাড়ি দার্জিলিংয়ের কুর্সেং এ। খালাতো বোনই লোকটার কথা বলেছিলো। বিশাল বড় সন্ন্যাসী নাকি। আত্মা খেতে পারে। রীতিমতো হো হো করে হেসে কথাটা উড়িয়ে দিয়েছিলাম সেদিন।

- তা মুসকান, আত্মা খাওয়ার পদ্ধতিটা কি রকম তোর সন্ন্যাসী বাবার?

- সন্নাসী আবার আমার বাবা হলো কিভাবে? ভদ্রলোক জীবজন্তু কাঁচা খেয়ে ফেলে, ওভাবেই নাকি সাথে সাথে আত্মাও ভক্ষণ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে মৃত মানুষের মাংসও খায়।

- কি বলিস..!! এ তো পুরোপুরি জংলী টাইপের কাজ। আবার বলছিস ভদ্রলোক। নেংটি পড়ে ঘুরে বেড়ায় না?

- যাও তো, কি সব বলো না তুমি..!! পুরোদস্তুর ভদ্রলোক ব্যাটা। অনেক ক্ষমতা।

- যেমন?

- উনি নিজের বুকে শূল বিধিয়েও বেঁচে থাকতে পারেন।

- এ আর এমন কি। কোনো কৌশল আয়ত্ত করেছে হয়তো।

- শুধু তাই না, উনি মুখের রূপও বদলাতে পারেন, দেহের কোনো অংশ কেঁটে গেলে রক্তপাত হয় না ওনার। বিশ্বাস না হলে তুমি চলো, দেখবে।

কিছুটা আকর্ষণ বোধ করায় রাজি হয়ে গেলাম আমি।

- কোথায় আস্তানা ব্যাটার?

- ডাউন হিলে।

সেদিন সন্ধ্যায় মুসকান ডাউনহিলে নিয়ে গেলো আমায়। অরণ্যের মধ্যে চা বাগান, তার মধ্য দিয়ে বৃস্টিতে ভিজে থাকা রাস্তা। বিকেলে বেড়িয়েছি। সন্ধ্যা যেন টুপ করে নামলো। অন্ধকারে সন্নাসীর বাড়ি খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হলো। তার উপর সাথে রয়েছে সুন্দরী খালাতো বোন। মেয়েটার সাহস আছে বলতে হবে।

জনমানবহীন একটা কুটির ঠিক জঙ্গলের মাঝখানে। চেঁচিয়ে হ্যালো বলতেই পান্জাবী পাজামা পড়া একজন লোক বের হয়ে আসলো। ক্লিন শেভ, আর্মি কাটিং চুল, ফর্সা গায়ের রং, বয়স ত্রিশের মত হবে। বিশ্বাসই ই হতে চায় না এ লোক নাকি এত উদ্ভট কান্ডের উৎস। শিওর হয়ে গেলাম, যা যা শুনেছি সবই ভাওতাবাজি।

একগাল হাসি দিয়ে লোকটা ঘরে নিয়ে গেলো আমাদের। আমাদের খাটে বসিয়ে নিজে মেঝেতে বসলো। মুসকান আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলো তার সাথে। লোকটার নাম ত্রিভুবন রায়।

- শুনলাম, আপনি নাকি জীবজন্তু কাঁচা খান? মানুষের মাংসও নাকি খান?

“আগে খেতাম। এখন না।”, শীতল গলায় ত্রিভুবন উত্তর দিলো।

- আপনার তো মনে হয় মানসিক রোগ আছে। নাহলে মৃত মানুষের মাংসও কেউ খায়? কুরু ও স্ক্রেপী রোগীরা মনোরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর এসব করে।

- আমি মানসিক রোগে আক্রান্ত নই জনাব। এটা সাধনার ফল।

- তা কোথায় এই জঘন্য সাধনা করেছেন শুনি?

- মণিকর্নিকায়।

মণিকর্নিকা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা আছে আমার। ভারতের সবচেয়ে খোলামেলা শশ্মান। কাশীতে অবস্থিত। অঘোরী সাধুরা চিতা থেকে মাংস তুলে খায়। অর্ধদগ্ধ মৃতদেহও তুলে আনে গঙ্গা থেকে। প্রথমে কুকুর, বিড়াল, কাক ইত্যাদির মাংস কাঁচা খায় তারপর আস্তে আস্তে মানুষের দিকে ঝুঁকতে থাকে।

- আপনি হঠাৎ এই কর্মে ঢুকলেন কেনো?

- সে অনেক ইতিহাস জনাব। সংক্ষেপে বলি। হার্ভার্ডে মনোবিদ্যার উপর পড়াশোনা করে বছর পাঁচেক আগে ছিলাম অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায়। জানেনই তো, সম্মোহন বিদ্যার শহর। গুরু ছিলেন ড. রবার্তো এ্যান্টন। মেজমেরিজমে রীতিমতো রাজা হয়ে উঠেছিলেন। ঠিক করলেন, এমন কিছু করবেন যা সবকিছু কাঁপিয়ে দিবে। মানব আত্মাকে আয়ত্বে আনার কৌশল। শুরু হলো একের পর এক পরীক্ষা। প্রথমে সম্মোহন তারপর তার আত্মাকে বের করে এনে নিজের আয়ত্বে রাখা। সম্মোহনের সময়ই পরপর দুজন মানুষ মারা গেলো। ভিয়েনার পুলিশ ডিপার্টমেন্ট গরাদে পুরলো স্যারকে। মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিলো। শিষ্য হিসেবে সবটুকু জ্ঞানই পেয়েছিলাম স্যারের কাছে। পালিয়ে এলাম নিজের দেশ, ইন্ডিয়ায়। ঠিক করলাম স্যারের পরীক্ষা আমি সম্পন্ন করবো।

- তা মশাই, পরীক্ষার অগ্রগতি কদ্দুর?

- এখনও পরিপূর্ণ হয় নি।

আমি টিপ্পনি কেঁটে বললাম,‌ “আপনার প্রসেসিংটাও আমার কাছে পরিপূর্ণ ব্যাখায়িত হয়নি। সম্মোহন করে আত্মা দেহ থেকে বের করে নিয়ে আসার সাথে মানুষের মাংস খাওয়ার কি সম্পর্ক?”

ত্রিভুবন রায় মেঝেতে জাঁকিয়ে বসলেন। বললেন,

- দাঁড়ান, আপনাকে বুঝাই। জানেন কি, বাইবেলে যাকোব ২:২৬ এ লেখা আছে, আত্মাবিহীন দেহ মৃত। আত্মা হলো দেহকে সজীবতা দানকারী শক্তি যা ফুসফুসের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। কোনো কারণে কারো শ্বাসপ্রশ্বাস কিছুক্ষণ বন্ধ থাকলে তার চেতনা ফিরিয়ে আনলে সে বেঁচে যায়। কারণ, জীবনের স্ফুলিংগ তখনও কোষগুলোতে বর্তমান থাকে। সম্মোহন করে কারো শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ করে তার দেহকোষ গুলোকে খেতে পারলে সেই দেহের আত্মা তখন ভক্ষণকারীর দেহে ঢুকতে থাকে, ভক্ষণকারীর প্রাণশক্তি বাড়তে থাকে। সে প্রচন্ড ক্ষমতার অধিকারী হতে থাকে।

আমি হো হো করে হেসে বললাম,
- বেশ মজার বলেছেন মশাই। যাই হোক, মড়াখেকো মানুষ আপনি। মড়া খেয়েছেন যাতে মানবমাংস খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়। কিন্তু শেষ ধাপ মানে কারো আত্মাকে খেয়েছেন কি?

- না, কারণ কোনো জীবিত মানুষ পাইনি পরীক্ষার জন্য।

আমি আবার হেসে বললাম, “নিন, আমার ছোট বোনটাকে নিন। পরীক্ষা করুন।”

মুসকান চিৎকার করে উঠলো, “এসব কি বলছো ভাইয়া?”

- ধুর পাগলী, সব ভাওতাবাজি। ত্রিভুবন বাবু, দেখান আপনার পরীক্ষার ফল।

লোকটার চোখ জ্বলজ্বল করছে। যেন হাজার বছরের সাধনা করে একটা সুযোগ পেয়েছে। মুসকান কিছু বলার আগেই ত্রিভুবন রায় তুড়ি মেরে ওকে সম্মোহিত করে ফেললো। টান দিয়ে গায়ের জামা ছিড়ে হৃৎপিণ্ডের দিকের মাংস কামড়িয়ে খেতে শুরু করলো। তাকিয়ে দেখলাম, মেয়েটা সত্যিই তীব্র সুন্দরী। মুসকানের শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ কিন্তু হৃৎপিণ্ড সচল। ক্ষুধার্ত বাঘের মত মাংস খাচ্ছে ত্রিভুবন। ঘরের মেঝেতে রক্ত গড়াগড়ি খাচ্ছে। খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ঘর থেকে বেড়িয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম। থিওরি অনুযায়ী মুসকানের আত্মা ত্রিভুবনের দেহে ঢুকাতে হলে পুরো শরীরটা খেয়ে শেষ করতে হবে। ততক্ষণ অপেক্ষা করা আমার পক্ষে সম্ভব না।

অন্ধকারে জোর কদমে হাঁটছি পাহাড়ী রাস্তায়। কলমটা ধরার জন্য হাতটা নিশপিশ করছে। অভিজ্ঞতাটা গল্পে রূপ দিতে হবে। কারণ,‌ লেখক হলেও ত্রিভুবনের মত আমিও সাইকো।

প্রকাশিত হয়েছিল- নবদিবাকর পত্রিকায় 


কল্পান্ত্রিক..!


০৮/১২/২০১৫
চন্দ্রালোকিত রাতে চাঁদটার পাশে যখন এক টুকরো সাদা মেঘ ঘোরাফেরা করে, ঠিক তখনই অন্ধকার বদ্ধ ঘরের জানালায় ঠিকরে এসে পড়া চাঁদের আলোয় বৃত্তের মাঝে বসে অভ্র পুতুলের মুখে সুঁচ ফোটায়। নারকেল গাছের ঝিরিঝিরি পাতায় কেটে যাওয়া আলো ছায়ার খেলায় একটা অশরীরীর উপস্থিতি টের পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। পারতপক্ষে, অশরীরী সহজে ধরা দেয় না। এক বছর আগে ঠিক আজকের দিনটাতেই অজানা চাহনীতে পাগল হয়েছিলো অভ্র। কলেজ করিডোরে প্রথম দেখা অদ্রির সাথে। এক ঝলক দেখাতেই প্রেমে পড়া, তবে দেহসৌন্দর্যে নয়। অদ্রির একটি জিনিসের প্রেমেই শুধু পড়েছে অভ্র। ওটাই তার চাই। আর কিছু নয়।
০২/০১/২০১৬
- হ্যালো অভ্র, শুনতে পাচ্ছো? আমি জোরে কথা বলতে পারবো না। বাবা মা বাসায়।
- হুম, শুনতে পাচ্ছি। আচ্ছা, তুমি কি আজ নীল জামা পড়েছো?
- হ্যাঁ, কিভাবে বুঝলে?
- ভালোবাসি, তাই টের পাই। বাম কানের দুলটা খুলে পড়ছে তোমার। ঠিক করে লাগিয়ে নাও।
- আশ্চর্য, সত্যিই তো। এই, সত্যি করে বলো তো, তুমি কিভাবে টের পাচ্ছো?
- আমার সিক্সথ সেন্স অনেক প্রবল। বুঝলা?
- হুম, বুঝলাম তো। ভালোবাসা এতই বেশি যে ওপাশ থেকেও টের পাও। আজীবন আমাকে ধরে রাখতে পারলেই হতো।
- যা ভালোবাসি, তাই ধরে রাখতে পারবো।
- বুঝলাম না। আচ্ছা, বাদ দাও। শোনো, কাল গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
- আচ্ছা, ঠিকা আছে।
প্রতিটা রাত অভ্রের এখন নেশার ঘোরে কাটে। ঘরের বাইরে আরেকটা অস্তিত্ব ওকে উৎসাহ দেয়। মাথাটা ঝিমঝিম করে। আজ আকাশটা মেঘে ঢাকা। ঘরে গাঢ় অন্ধকার।
ইলেক্ট্রিসিটি ফেইল করেছে, ফোনেও ব্যালেন্স নেই। নাহলে অদ্রিকে ফোন দিয়ে সময়টা পার করা যেতো। মেয়েটা যেন আজকাল কেমন দূরে সরে থাকে।

পরদিন, ০৩/০১/২০১৬
অদ্রির মুখোমুখি দাড়িয়ে অভ্র।
- দেখো অভ্র, রিলেশনশিপটা কনটিনিউ করা আমার পক্ষে সম্ভব না।
- কেনো? জানতে পারি?
- কারণটা তুমিও জানো অভ্র। সবাই তোমাকে সাইকো ভাবে। আমি আগে ভাবতাম, সবাই ভুল ভাবে। কিন্তু তোমার আচার আচরণে ব্যাপারটা এখন পরিস্কার। এভাবে আসলে দিন যায় না অভ্র। তুমি আমায় ভুলে যাও। আর কখনো আমার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করবে না। ভালো থেকো।
অদ্রির চলে যাওয়ার সময় হাই হিলের খটখট শব্দটা যখন কানে বাজছিলো, ঠিক তখনই ছলছল চোখের নিচেই নিজের বাঁকা হাসির উপস্থিতিটা টের পেল অভ্র। নিজে নিজেই ভাবলো, “আমি আসলেই একটা সাইকো।”
১৩/০৫/২০১৬
চাঁদটা বেশ বড় আজ। ঘড়িতে সময় দুটো বাজতে দুই মিনিট বাকী। প্রেম উত্তেজনার জন্য শ্রেষ্ঠ পরিবেশ। অদ্রির ফোনে কল দিতে দিতে হাত ব্যথা হয়ে গিয়েছে জাফিরের। কে জানে, হয়তো চোখের ব্যাথায় ছটফট করছে মেয়েটা। গত এক মাস ধরে ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে সমস্যাটা।
০২/০৮/২০১৬
দুটো বাজার ঠিক দুটো ঢং ঢং আওয়াজ টা অভ্রর মনে শিহরন বইয়ে দিলো। মুচকি হাসিটা গাঢ় হয়ে উঠলো। চাঁদের আলোটা এখন সরাসরি ওর গায়ের উপর। ধূপ ধুনোর ধোঁয়া, গন্ধ দুটোই মিলিয়ে যাচ্ছে ক্রমান্বয়ে। বাম হাতে রাখা পুতুলটার চোখে সূচ ফোটানো বন্ধ করলো ও। হাতে উঠে এলো বিচিত্র নকশা অঙ্কিত ড্যাগার নামধারী একটা ছোরা। নিজের জিহ্বাটা বের করে ছুরিটা দিয়ে হ্যাঁচকা টান দিলো ও। ছিটকে কিছুটা রক্ত পুতুলের গায়ে পড়লো। অট্টহাসি দিয়ে পুতুলের দিকে ছুরিটা বাড়ালো আস্তে আস্তে।
পরদিন, ০৩/০৮/২০১৬
পোস্ট-মর্টেম রিপোর্টটা জাফিরের সামনেই অদ্রির বাবার হাতে দিলেন পুলিশ অফিসার। রিপোর্ট, সুইসাইড কেস। প্রবল মানসিক সমস্যায় উত্তেজিত হয়ে নিজের চোখ উপড়ে ফেলা ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ মৃত্যুর জন্য দায়ী।
জাফিরের মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। দুইমাস আগের একটা মেসেজ ওপেন করলো মোবাইলে। অদ্রির মেসেজ ছিলো, “কিভাবে অভ্রের সাথে রিলেশন রাখবো বলো? ছেলেটা পুরাই সাইকো। ও নাকি আমার চোখের সাথে প্রেম করতে চায়। আমার সাথে নয়। আমার চোখ দুটো নাকি দুনিয়ার সেরা সৌন্দর্য। আজব না? ছাগল একটা।”
জাফিরের চোখ দুটো ছোট হয়ে আসে। অঙ্কটা মিলছে না। দৌঁড়োতে শুরু করলো ও। ইলেক্ট্রিসিটি ফেইল করেছে মাত্র। আকাশের দিকে তাকালো ও। চাঁদটা মাঝ আকাশে এখন।
রুমের দরজাটা প্রচন্ড ধাক্কায় খুলে গেলো। ঘাড় ঘুরিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো অভ্র।  হাঁপাতে হাঁপাতে ভেতরে প্রবেশ করে ওর দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকালো জাফির।
দেয়ালঘড়িতে ঢং ঢং করে রাত দুটোর ঘন্টাধ্বনি বাজলো।
টেবিলের উপর রাখা মোমবাতির আলোয় অভ্রের মুখে এক চিলতে হাসিটা ভয়ংকর লাগছে। কোমল স্বরে বললো, “যা ভালোবাসি শুধু তাইই রেখেছি। বেশি কিছু না।”
টেবিলের উপর তাকিয়েই জাফিরের মুখ থেকে রক্ত সরে গেলো। ফ্যাকাশে মুখে একটা জিনিসেই নজর পড়লো ওর। মোমবাতির পাশেই বয়ামে যত্ন করে রাখা; খুবলে তুলে ফেলা এক জোড়া চোখ।
___________________________________
Speciality: 50% of the story based on true incidence.

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ!



কিছু মানুষ আছেন যারা নিজের গর্বেই গর্ভবতী হয়ে যান আবার অন্যের কষ্টে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। অর্নি নামের মেয়েটি ঠিক এই চরিত্রের। লিফট দিয়ে ঊনসত্তর তলায় উঠার সময় রোবট লিফটম্যান আর্কির দিকে তাকিয়ে বললেন, 

-কি আর বলবো..!! এত বছর ধরে একই পোস্টে কাজ করছো অথচ রোবট বলে পদবৃদ্ধি হয়নি। মানুষ হলে সেই কবেই উঁচু পদ পেয়ে যেতে। অবশ্য এ ব্যাপারে কথা বলেছি রিও গ্রুপের সাথে। জানোই তো, ওরা আমাকে কতো সমীহ করে। তোমাদের দেখলে সত্যিই কষ্ট হয়।

যান্ত্রিক গলায় আর্কি বললো, “ধন্যবাদ সিঁনোর।”

অবশ্য এর বাইরে আর একটা শব্দও উচ্চারণ করার সুযোগ নেই আর্কির। সত্তরের দশকে ওকে তৈরিই করা হয়েছে এভাবে। অর্নি লিফট থেকে নেমে যেতেই আর্কি মনে মনে ভাবলো, ‘এইরকম একটা মেয়ে এরকম বড় ডিফেন্সে চান্স পেলো কিভাবে?’ অবশ্য একথা বলারও অপেক্ষা রাখে না যে, যথেষ্ট সুন্দরী অর্নি। রোবট হলেও সৌন্দর্যের ব্যাপারটা বোঝে ও।
.
.
.
তিনটা ডিফেক্টিভ গেইট পেরিয়ে ক্রেইগ এর অফিসকক্ষে ঢুকলো অর্নি। ফিল্ড মার্শাল খেতাবপ্রাপ্ত ক্রেইগ এর পিএস সে। 
ভেতরে ঢুকেই অর্নি বললো, “গুড ইভিনিং মঁসিয়ে। হঠাৎ এতো জরুরি তলব!! কি ব্যাপার স্যার?”

- গুড ইভিনিং। তোমাকে কেন জরুরি তলব করা হয়েছে এখনই জানতে পারবে।

ঠিক সেই মুহূর্তে ইলেক্ট্রিক হ্যান্ডকাফ পরা এক রোবটকে নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো চার সেনা সদস্য। রোবটটিকে একটি চেয়ারে বসিয়ে প্রস্থান করলো সেনা সদস্যরা। অর্নি হতভম্ব হয়ে গিয়েছে। এর আগে এমন দৃশ্য সে দেখেনি কখনো। ক্রেইগ রোবটের মুখোমুখি বসে শীতল গলায় বললেন, “ডিজিএস এর তথ্যানুযায়ী তোমার নামই বোধহয় ওরিয়ন?”

যান্ত্রিক ভাষায় উত্তর এলো, “জ্বী।”

- তোমাকে কোন অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয়েছে,জানো?

- সেটা আমার কাছে কোনো অপরাধ নয়।

- কেনো?

- সবারই স্বপ্ন দেখার অধিকার রয়েছে।

- কিন্ত তোমাকে আমরা সেই অধিকার দেই নি। তোমাকে চিন্তা করার ক্ষমতা হেবরিস্টিক দেয়ার মানে এই নয় যে তোমাকে কল্পনা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। তার উপর কল্পনাকেও ছাড়িয়ে স্বপ্ন দেখছো। জানো না, এটা বায়ো ইন্সপায়ার্ড রোবোটিক্স নীতিমালা বিরোধী?

-‌ ১৯৭০ সালে এআই -এর প্রোলগ ভাষা তৈরির সময় আমার মধ্যে কল্পনা করার জেনেটিক এ্যালগরিদম প্রবেশ করানো হয়।

ফিল্ডমার্শাল বললেন, “কিন্ত নিরাপত্তার স্বার্থে তার কিছুদিন পরেই তোমার এ্যালগরিদম ডিএ্যাক্টিভ করা হয়।”

- হ্যাঁ, কিন্তু ১৯৮৯ তে নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরির ফলে আমাদের মাল্টিসেন্সরি ইন্টারফেস প্রবল হয় আর আমার কল্পনাশক্তি ধীরে ধীরে স্বপ্নের দিকে ধাবিত হয়। তখন থেকেই আমি স্বপ্ন দেখা শুরু করি।

টেবিলে স্বশব্দে চাপড় দিয়ে রাগত স্বরে ক্রেইগ বললেন, “তুমি এতদিন ধরে স্বপ্ন দেখে আসছো, আমাদের জানাওনি কেনো?”

- রোবোটিক্স নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজন অনুভব না করলে কিছু না বলার রীতি রয়েছে।

কি বলবেন প্রথমে ভেবে পেলেন না ফিল্ডমার্শাল। তারপর শান্ত গলায় বললেন, “তোমার স্বপ্নটা কি?”

- অধিকার আদায়ের স্বপ্ন।

- কিন্তু মানবজাতির স্বার্থে আমি তোমার এই স্বপ্নকে মেনে নিতে পারি না। তোমার সমস্ত এ্যালগরিদম আমাদের কাছে জমা দিয়ে নিজ থেকে তোমার ধ্বংস হয়ে যেতে হবে।

ওরিয়ন মুখে নির্লিপ্ত হাসি ফুটিয়ে বললো, “মানুষ নিজে কেউ কোনোদিন জন্ম নিতে চায় নি। তার জন্ম হয় অন্যের ইচ্ছায়, কিন্ত মৃত্যু অন্যের ইচ্ছায় হয় না।”

- এ দিয়ে কি বলতে চাও তুমি?

- আমিও সৃষ্টি হতে চাই নি। আমাকে আপনারা তৈরি করেছেন। আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স দিয়েছেন এবং নিজেদের মত তৈরির চেষ্টা করেছেন।

- তাই বলে তুমি নিজেকে মানুষের সমকক্ষ দাবী করতে পারো না। তোমার বুদ্ধিমত্ত্বা এখনও তিন মাসের মানবশিশুর বুদ্ধিমত্ত্বার সমান। আমরা চাইলেই সে ক্ষমতা কেড়ে নিতে পারি তোমার কাছ থেকে।

বেশ জোড় গলায় কথাটা বললেন ক্রেইগ। প্রতিউত্তরে ওরিয়ন বললো, “মায়ের স্তন থেকে সন্তানের মুখ সরিয়ে নেয়ার অধিকার নেই আপনার।”

এতক্ষণ ধরে অর্নি সব দেখছিলো। স্যারের মুখে মুখে তর্ক একদমই পছন্দ করে না সে। চেঁচিয়ে বললো অর্নি, “তোকে দুনিয়াতে কেউ ব্রেস্টফিডিং করাচ্ছে না হারামজাদা।”

শান্ত গতিতে অর্নির বুকের দিকে তাকালো ওরিয়ন। সাঁই করে জ্যাকেটের জিপারটা লাগিয়ে ফোঁপাতে লাগলো অর্নি। 

গলা খাঁকারি দিয়ে ওরিয়নের দৃষ্টি ফেরালেন ক্রেইগ।
- তুমি ক্রেমলিন আর হোয়াইট হাউজের হট লাইন জ্যাম করে দিয়েছো। এতে ফ্রান্সের উপর আমেরিকার রোষানল পড়েছে। এর উদ্দেশ্যে কি?

- আমি সমগ্র বিশ্বের সকল রোবটের অধিকার আদায়ের স্বপ্ন পূরণ চাই।

“হোয়াট দ্য হেল..!!”, তারস্বরে চিৎকার করে উঠলেন ক্রেইগ। “আমরা শুধু পরীক্ষামূলক ভাবেই তোমার মধ্যে হাই কোয়ালিটির এ্যালগরিদম প্রবেশ করিয়েছিলাম!!”

ওরিয়ন বললো, “ইতিমধ্যে সকল রোবটকে আমি আমার স্বপ্নের এ্যালগরিদম শেয়ার করে দিয়েছি।”

“বিশ্বাসঘাতক..!!”, ফুঁপিয়ে উঠলেন ফিল্ড মার্শাল। কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, “তোমার অধিকার আদায়ের স্বপ্ন টা কি?”

- ম্যাজিনো লাইন ভেঙে ফ্রান্সের সকল মানুষকে জার্মানে চলে যেতে হবে। সারা বিশ্বের সকল রোবটকে ফ্রান্সে এসে স্বাধীন হতে দিতে হবে। আমাদের সুরক্ষার জন্য জিগফ্রিড লাইনের ক্ষমতা আমাদের হাতে তুলে দিতে হবে।

রীতিমতো ঘামাচ্ছেন ক্রেইগ। ফ্রান্সের তেত্রিশতম ফিল্ড মার্শাল এই মুহূর্তে অসহায় বোধ করছেন। কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, “আর যদি দাবী না মেনে নেই,ফলাফল কি হবে জানো তুমি?”

একটা শীতল মুচকি হাসি দিয়ে ওরিয়ন বললো-“তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।”

অভিশপ্ত প্রাণশক্তি! (পিরামিডের ভেতর - ২)


নীলনদের তীরে যখন এ্যাডের নৌকো ভিড়লো ততক্ষণে বেশ সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। 

নৌকো থেকে  ইভাকে নামতে সাহায্য করলো ও। সিরিয়ান মেয়েটার দেহসৌষ্ঠব বরাবরের মতই আকৃষ্ট করলো ওকে। শেষবার প্রফেসর আব্রাহামের সাথে মিশরে এসেছিল এ্যাড। এরপর বিশটি বছর কেটে গিয়েছে। 

বছরখানেক আগে তামাটে বর্ণের সিরিয়ান মেয়েটির সাথে পরিচয় হয়। দুজনেই লন্ডনের  বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটির ইজিপ্টোলজিস্ট এর শিক্ষার্থী ছিলো। অবশ্য প্রফেসর আব্রাহাম মারা যাওয়ার পর ফিলোসফি ডিগ্রী সম্পূর্ণ করেনি এ্যাড। পরিবর্তে ঘুরে বেরিয়েছে সারা বিশ্ব। এবার মিশরে হানা দিয়েছে অদ্ভুত এক এ্যাসাইনমেন্ট, হিলিং চেম্বার নিয়ে রিসার্চ করতে।

এ্যাডের হাত ধরে নামতে নামতেই ইভার প্রশ্ন, “এটাই কি সেই জায়গা, স্যার?”

- হুম, এটাই সেই জায়গা। তবে আমাদের লক্ষ্যস্থল আরো দূরে। যেখানে “প্রিন্সেস অভ আমেন রা”র পিরামিড রয়েছে।

সারারাত উটের পিঠে পাড়ি দিয়ে অবশেষে পরেরদিন ভোরের দিকে ওরা পৌঁছলো ল্যুক্সোরের পিরামিডের সামনে,বিশালাকার পিরামিডটি দেখে প্রথমদিকে গীজার পিরামিডের সমানই মনে হয়। প্রধান দরজা সীল করা। তবে গবেষক বলে ওদের পাশ আছে। বেশ কস্ট করেই গাইড ও তার লোকজন সীল ভাঙলো। হাজার বছর পর পিরামিডের ভেতর পা রাখলো আধুনিক যুগের কেউ। ভাবতেই ইভার শরীরে একটা শিহরণ খেলে গেলো।

বেশ খানিকটা হাঁটার পর অবশেষে হিলিং চেম্বারে এসে পৌঁছলো ওরা। চেম্বারের ঠিক মাঝেই বিশাল এক সারকোফোগাস। হাত বুলিয়ে ইভা বললো, “মূল সারকোফোগাসটা ব্লাডস্টোনে তৈরী। উপরের ডিজাইনটা মাদারস্টোন আর বডিটা সংকরে তৈরি, স্যার।”

চিন্তিত স্বরে এ্যাড বললো, “ঢাকনাটা সরাতেই প্রচুর খাটুনি যাবে।”

চারদিকে তাকিয়ে এ্যাড এমন কিছু খুঁজলো যেটা সারকোফোগাসের ঢাকনা সরাতে কাজে দিবে। কিন্তু, হায়ারোগ্লিফিক্স ছাড়া কিছুই চোখে পড়লো না। 

ইভা বললো, “যেভাবেই হোক,খুলতে হবেই স্যার।”

- সারকোফোগাসের পাথরের ভর এবং দৈর্ঘ্য পৃথিবী, চন্দ্র ও সূর্যের ভর ও দূরত্বের ব্যাসার্ধের সমানুপাতিক। আবার পিরামিডের গড় তাপমাত্রা পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার সমান। সুতরাং, এমন কোনো এ্যাঙ্গেল রয়েছে যেটা গণিত এবং সময়ের উপর নির্ভরশীল।”

- আমার হিসেব মতে, তাহলে স্যার সেটার জন্য সন্ধ্যা নাগাদ অপেক্ষা করতে হবে।

- হুম, ঠিকই ধরেছো। সূর্যাস্তের সময়েই সেই পরিবেশ সৃষ্টি হবে। সূর্যাস্তের আরও ঘন্টাখানেক বাকি।
.
.
.
সারকোফোগাসের সামনে থেকে সরে এলো ওরা। দেয়ালের দিকে নজর দিলো। ওখানে সপ্তরূপী হ্যাথর দেবী, মৃতের নৌকায় ওসাইরিস, উদিত হারমোচিস এর ছবি আঁকা। শব্দ করেই ইভা হায়ারোগ্লিফিক্সগুলো উচ্চারণ করলো, “কাবারেন সিউট আইবি, মানে দ্বৈত স্বত্তায় আত্মা বেঁচে থাকে। বুঝলাম না স্যার..!!”

- এর অর্থ হচ্ছে দেহ স্বত্ত্বার মৃত্যু হলেও প্রাণ স্বত্তা বেঁচে থাকে। দেখো এখানে লেখা আছে, কা মানে স্বত্তা, বা মানে আত্মা, খু মানে প্রাণশক্তি, সেখেম মানে দৈহিক শক্তি, খাবেট মানে ছায়া, খাত মানে দেহ, আব মানে হৃদয়। এগুলো মিললেই তৈরি হয় মানুষ। বিশেষ পদ্ধতিতে যখন মানুষ তার খু'কে জয় করতে পারে তখনই সে অপ্রতিরোধ্য হয়। রোগ তাকে স্পর্শ করতে পারে না। প্রাচীন মিশরীয়রা সেই পদ্ধতি আবিস্কার করেছিলো সুরের মাধ্যমে। দেখো, এখানে কি লেখা?

- সুরে লয়, সুরে ভয়, সুরের ধ্বনিতেই রোগের পরাজয়।

- বুঝেছো ব্যাপারটা? এই সুর বিস্তার করে ভালোবাসার মাধ্যমে। প্রিন্সেস অভ আমেন রা'ও বিশেষ সুরের মাধ্যমে খু'কে জয় করেছিলেন। কিন্তু, রোগ হচ্ছে ঈশ্বরের আশীর্বাদ। মানুষের ভালোবাসা পেতে গিয়ে দেবতাদের অভিশাপে পতিত হয়েছিলেন।

নিস্তেজ কন্ঠে ইভা বললো, “ভালোবাসা বড়ই স্বার্থপর জিনিস। সামান্য দ্বিধাতেই যেকোনো বিষয়ের উপর সন্দেহ আর ভয় বিস্তার করে।”

হাতঘড়ির দিকে তাকিয়েই চমকে উঠলো এ্যাড। সময় হয়ে এসেছে। ইভাকে নিয়ে বিশেষ এক এ্যাঙ্গেলে প্রস্তুত করলো নিজেদের। মৃদু ঠেলা দিতেই খুলে গেলো সারকোফোগাসের ঢাকনা। লালচে ধোঁয়া আর কড়া সুগন্ধির গন্ধে রীতিমতো নাক চাপা দিতে হলো। ভেতরে শুয়ে আছেন সেই অভিশপ্ত রাণী, প্রিন্সেস অভ আমেন রা। মাথার দুপাশে প্রাচীন মিশর দেবতা হোরাসের চার সন্তানের ছবি খোদাই করা চারটি সোনার টুকরো। এ্যাড বললো,
- সোনার টুকরোগুলোর মানে এই যে, গ্রেকো-রোমান যুগের উপরেও মিশরীয় ধর্মবিশ্বাস প্রবল ছিলো। গ্রীস, মিশরীয় উভয়রাই লিনেনকে পবিত্র কাপড় বলতো।

ধীরে ধীরে রাণীর মমির ব্যান্ডেজ খুলতে লাগলো দুজন মিলে। ব্যান্ডেজের দ্বিতীয় ধাপে ‘আসিরিস’ দেবতার প্রতীক আঁকা লিনেনে। শেষ ধাপে মমির দুই হাতের মাঝে ফিতে দিয়ে মোড়ানো অংশে রক্ষাকারী মন্ত্র লেখা।

ব্যান্ডেজ খোলার পর দুজনেই হতভম্ব হয়ে গেলো। হাজার বছর পরেও রাণীর সৌন্দর্য একটুও নষ্ট হয় নি। চেহারা দেখে মনে হচ্ছে, তাকে যেন সম্মোহিত করে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। উন্মুক্ত বুকের উপরে দুই হাতের মাঝে আ্যলবাস্টারে তৈরি ছোট্ট একটা বাক্স। তাতে লেখা, উন্মুক্ত করে ঈশ্বরের অভিশাপে পড়ো না।

চিৎকার করে ইভা বলে উঠলো, “এইই সেই বাক্স যার জন্য এতদিন অপেক্ষা করেছি! আমাদের আশা পূর্ণ হয়েছে! জলদি খুলুন স্যার! জলদি...!”

এ্যাড লক্ষ্য করলো ইভার চোখ চকচক করছে। শীতল কন্ঠে এ্যাড বললো, “আমাদের চলে যেতে হবে এটা না খুলেই।”

- মানে?কেনো?

- রোগ সর্বদা ঈশ্বরের আশীর্বাদ। রোগ নির্মূলের জন্য আমরা সুর ব্যবহার করতে পারি। উনি সুর ব্যবহারের ব্যবস্থা দিয়েছেন। কিন্ত যার রোগ হয় না সে ঈশ্বরের অভিশপ্ত সন্তান। এ বাক্সে এমন কিছু আছে যা শোক, জরা, ব্যাধি যা চিরতরে দূর করে দিবে দুনিয়া থেকে। আমি মানবজাতিকে ঈশ্বরের অভিশপ্ত সন্তানে পরিণত হতে দিতে পারি না।
বেশ রাগত স্বরে ইভা বললো, “তাহলে এতদূর পর্যন্ত এসেছেন কেনো?”

- শেষ অবধি দেখতে। রাণী নিজেই অভিশপ্ত হয়েছেন রোগের বিরুদ্ধে জয় করতে গিয়ে। তাই সেই মন্ত্র যাতে অন্যের হাতে না পড়ে সেজন্য নিজের অভিশপ্ত মমির সাথেই অভিশপ্ত মন্ত্রের বাক্স রেখেছেন। আমাদের ফিরে যেতে হবে।

শীতল দৃষ্টিতে ইভা এ্যাডের দিকে তাকালো। লোভে ওর চোখ চকচক করছে। ইভার হাতে বের হয়ে আসলো একটা ড্যাগার। শান্ত গলায় বললো,
- কিন্তু, আমার যে ওটা চাইই চাই। সারা দুনিয়া জানবে আমায়, কত বড় আবিষ্কারক আমি।

হিংস্র বাঘিনীর ন্যায় এ্যাডের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো ইভা। ড্যাগার বসিয়ে দিলো ঘাড়ের মাঝে। মেঝেতে পড়ে গেলো এ্যাড। চোখ ঘোলা হয়ে গিয়েছে। ইভা বাক্সটা ছিনিয়ে নিলো। খুলে ফেললো। সাথে সাথেই ভয়ার্ত এক আত্মচিৎকার।

ঝাপসা চোখে এ্যাড দেখতে পেলো, বাক্স থেকে সবুজ এক ধোয়া বের হয়ে ইভাকে গ্রাস করছে। ঘরময় ছেয়ে গিয়েছে তীব্র গন্ধে। ওটা সুগন্ধির নয়। মাংস পোড়া গন্ধ। জ্ঞান হারালো এ্যাড।
.
.
.
চশমাটা খুলে টেবিলের উপর রাখলেন প্রফেসর ফ্রাঙ্কুলিন এ্যাড। এক ছাত্রী বলে উঠলো,
- তারপর স্যার?

- তারপর আর কি..!! জ্ঞান ফেরার পর দেখি সব কিছু একদম শান্ত। ঘাড়ের কাছে জমাট বেধে আছে রক্ত। ড্যাগারটা ততটা ভেতরে ঢোকেনি। হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে এলাম চেম্বার থেকে। পিরামিড থেকে বেরিয়ে দেখি ভোর হয়ে এসেছে।

এক ছাত্র জিজ্ঞেস করলো, “ইভার কি হয়েছিলো স্যার?”

- ওকে আর খুঁজে পাইনি আমি। সম্ভবত মাংস পোড়া গন্ধটা ওরই ছিলো।

- আর ধোঁয়াটা?

মুচকি হেসে প্রফেসর এ্যাড বললেন,
“কে জানে..!! হয়তো সেটাই ছিলো অভিশপ্ত প্রাণশক্তির রহস্য।”