- প্রমাণিত হওয়া খুনীর ১৩৮ টি খুনের শেষ ৬ টি'র বর্ণনা তুলে ধরছি জুরি বোর্ডের সামনে।
কথাটি বলে ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেললেন এ্যাডি। গত দুইদিন ধরে ১৩২ টি খুনের রেকর্ড পড়ে শোনাতে হয়েছে তাকে। স্বাভাবিকভাবেই ক্লান্ত সে।
গ্যাব্রিয়ানো বলে উঠলেন,
- শুয়োর জানি কয়টা খুন করেছিলো?
- ধারণা করা হয় চার'শ টা। প্রমাণাদি মিলেছে ১৩৮ টা।
- নাম কি হারামজাদার?
এ্যাডি এইবার গ্যাব্রিয়ানোর দিকে বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকালেন।
- আপনার বোধহয় এইবার অবসর নেয়া উচিত গ্যাব্রিয়ানো। গত দুইদিনে আসামীর নাম শতবার উচ্চারিত হয়েছে।
- আহা,বলোই না? অবসরের বাকি আরও তিন বছর। বয়সও হলো। বুঝোইতো..
- অপরাধীর নাম লুইস গারাভিতো।
- ও আচ্ছা। চলো তাহলে শুরু করা যাক?
এ্যাডি মাথা ঝাঁকিয়ে ফাইল খুলতে শুরু করলো।
.
.
.
১৯৮৭ এর ৩'রা মে।
দুপুর দু'টো বাজে। নিজের গাড়িতে বসে আছেন মিগুয়েল নামের এক ধনকুবের। হঠাৎই এক লোক এসে মাথায় রিভলবারের নল ঠেকিয়ে গাড়ির চাবি চাইলো। মিগুয়েল গাড়ির চাবি না দিয়ে চিৎকার করতে চাওয়ার আগেই ট্রিগারে চাপ পড়লো।
গুলি বের হওয়ার আগে খুনি নিজেই 'ডাকাত-ডাকাত' বলে চিৎকার শুরু করলো,লোক জমায়েত হতে হতে তিনটে গুলিও বেরিয়ে যায়,পরে শত শত লোকের ভিড়ে স্বাভাবিকভাবেই হারিয়ে গেলো সে।
কোনো দৌঁড়ঝাঁপের পলায়ন নয়। কেউ জানতেও পারলোনা যে খুনী তাদের মধ্যেই মিশে গেছে।
.
.
১৯৮৭ এর ২৭'শে আগস্ট।
'সি মন্টিগো' হোটেলে ভ্যালেরিয়া এই মাত্র বিছানা ছেড়ে উঠলো। লুইস নামের এই ভদ্রলোকটা বদমাশের এক হাত। এই নিয়ে দু'ঘন্টায় তিনবার করলো। তাও জোর করে।
টাকা চাইতেই লোকটা বলে উঠলো,
- কিসের টাকা?
- মানে? একবারের কথা বলে একরাতেই তিনবার মেরে দিলে। টাকা দাও,তোমার সাথে শোয়া আর সম্ভব না। এর আগেও তুমি টাকা দাওনি।
- টাকা তো নেই সোনা।
- তুমি টাকা দেবে নাকি আমি চিৎকার করে লোক ডাকবো?
লুইস হেসে বললো,
- ডাকো তাহলে?
চিৎকার করার পূর্বমুহূর্তেই ভ্যালেরিয়ার গলা চেপে ধরলো একজোড়া বজ্রমুঠি।
এক ঘন্টা পর হেলতে-দুলতে হোটেল থেকে বেরিয়ে গেলেন ভদ্রলোক।
.
.
১৯৮৭ এর ২৫'শে নভেম্বর।
নভেম্বরের রাত। বেশ ভালোই ঠান্ডা পড়েছে। সোফিয়া দ্রুতবেগে হাঁটছে। কেন জানি মনে হচ্ছে কেউ পিছু নিয়েছে তার,কিন্তু কাউকেই দেখতে পাচ্ছেনা সে।
রাতের খাবার শেষে ঘুমিয়ে পড়লে নিঃশব্দে উঠে এলো লোকটি। পাশে রাখা বালিশটা মুখের উপর চেপে ধরলো সর্বশক্তি দিয়ে। মিনিটখানেক পর ছুড়ি দিয়ে উদভ্রান্তের মত সোফিয়ার জামা ছিড়তে শুরু করলো খুনি। তার মুখে লেগে আছে বিকৃত এক হাসি।
এক সপ্তাহ পরে 'হেরনান হোটেল' কক্ষের ফ্রিজে রুম ক্লিনার এক তরুণীর মাথা আবিস্কার করলো। আস্তে আস্তে কাটা হাত-পা,অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেরিয়ে আসতে লাগলো।
রুম টি ভাড়া নেয়া হয়েছিলো লুইস গারাভিতো'র নামে।
.
.
১৯৮৮ এর ১৭'ই ফেব্রুয়ারি।
সেন্ট্রাল পার্কের ভেতর দিয়ে হাঁটছেন মারিয়ানা। সত্তর বছর বয়সেও দিব্যি হাঁটতে পারছেন বলে নিজের উপর বেজায় সন্তুষ্ট তিনি। দিনের বেলা জনমানুষে ভর্তি থাকে বলে সন্ধ্যার পরেই নির্জনে হাঁটতে পছন্দ করেন তিনি।
হঠাৎ করেই পেটে ধারালো কিছুর আঘাতে বসে পড়লেন মারিয়ানা। চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছেন না। চিৎকার করতে চেয়েও করতে পারলেন না। গলা দিয়ে স্বর বেরোচ্ছে না। উঠে দাঁড়াবার চেস্টা করতেই নাড়িভুড়িগুলো পেটের চেরা ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে এসে রাস্তা ভরিয়ে ফেললো।
শেষ নিঃশ্বাস ফেলার আগে ঝাপসা চোখে দেখতে পেলেন কেউ একজন নাড়িভুড়িগুলো হাতে নিয়ে মুখে পুরছে আর চিবোচ্ছে।
.
.
১৯৮৮ এর ১২'ই জুন।
প্রাইসের ডিভোর্স হয়েছে একমাস হলো। এখন নিজেকে অধিক সুখী লাগে তার। নিত্যদিন ঝগড়া-বিবাদের চেয়ে স্থায়ীভাবে আলাদা হয়ে যাওয়াই ভালো।
দুপুরের দিকে দরজায় টোকা পড়তেই খুলে দিলো প্রাইস। মাথা কামানো একজন মধ্যবয়স্ক লোক ঢুকলেন ঘরে। হেসে জিজ্ঞেস করলেন,
- ঘরে সেলাই মেশিন আর স্যুপ বানানোর কেতলি আছে ইয়াং ম্যান?
মাথা কামানো ভদ্রলোক এতক্ষণে হাঁপিয়ে গেছেন। মানুষের চামড়া এর আগে ছাড়াননি কখনো। এ ছাঁইপাশ চামড়া দিয়ে কুশন আর পাপোস হবে কি না কে জানে..!! স্যুপ-টা একটু দেখে আসা যাক।
রান্নাঘরে এসে হাসি ফুটলো তার মুখে,প্রাইসের মাথাটা বেশ ভালোই সিদ্ধ হয়েছে। মগজ-ঘিলু সব নাক,কানের ফুঁটো দিয়ে বেরিয়ে এসে পানিতে মিশে যাচ্ছে। একটু লবণ চেখে দেখা দরকার।
.
.
১৯৮৮ এর ৮'ই ডিসেম্বর।
রসায়নবিদ নিকোলাস,স্যুয়ারেজ লাইন পরীক্ষা করতে গিয়ে গলিত মাংসপিন্ড পেলেন। ভালো করে পরীক্ষা করে দেখতে পেলেন,তা এসিডে গলিত মাংসপিন্ড।
স্যুয়ারেজ পাইপ ধরে নির্জন এক রেস্ট হাউজ পর্যন্ত পৌঁছলেন তিনি। বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই দেখতে পেলেন,গোটা বিশেক জারে হাইড্রোক্লোরিক এসিডে ডোবানো শিশুর দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। আস্তে আস্তে গলে গলে বিশ্রী মাংসপিন্ডে পরিণত হচ্ছে সেগুলো।
ঠিক সেই মুহূর্তেই মাথা কামানো এক মধ্যবয়স্ক লোক ঘরে প্রবেশ করলো। নিকোলাসের হাতে রডের ভারী টুকরো টা ধরা ছিলো তখনও।
.
.
.
বোগোতায় পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যা নেমে এলো। এই শহরের ট্রেনগুলোর যাচ্ছেতাই অবস্থা।
চেয়ারে আয়েশ ভঙ্গিতে বসে আছেন এ্যাডি। তার মুখোমুখি বসা লুইস গারাভিতো।
- লুইস,তুমি কি জানো,দুনিয়ার সবচেয়ে কম শাস্তির জেলখানায় আছো তুমি?
- আমার চোখ বাঁধা ছিলো। এই জেলখানার নামই জানিনা এখনও।
- তুমি আছো কলম্বিয়ার 'লা মডেলো' কারাগারে।
- ও আচ্ছা।
- তোমার সাজা হয়েছে মাত্র ত্রিশ বছরের। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ হলে সাজা হতো নয়'শ বছরের যাবজ্জীবন।
- জানি আমি।
- আমি তোমাকে একটা প্রস্তাব দিতে চাই। প্রস্তাবটা গ্রহণ করলে তোমার শাস্তি বাইশ বছরে নেমে আসবে।
লুইস মুখ তুলো এ্যাডির দিকে তাকালো।
- কলোম্বিয়ার পুলিশ ডিপার্টমেন্টে লাশ শনাক্তের কাজ দেয়া হবে তোমায়। লাশের ব্যাপারে তোমার অভিজ্ঞতা ভালো বিধায় সরকার এ সুযোগ দিচ্ছে তোমায়। ভেবে দেখো।
- আমি রাজি।
.
.
.
জেলখানার বাইরে বেশ শোরগোল হচ্ছে। লুইস জানে,এ আন্দোলন তার বিরুদ্ধেই। কারণ,তার সাজার মেয়াদ ত্রিশ থেকে বাইশ বছর করা হয়েছে। জনগণ এ রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে আর চাচ্ছে,লুইসের জন্য নতুন করে প্রসিকিউশন করা হোক।
লুইস ভালো করেই জানে,সাইকো কিলারদের জন্য নতুন করে প্রসিকিউশন হয় না। কিন্ত আন্দোলনের মুখে সরকার রায় পাল্টাতে বাধ্য হবেই।
লুইসের বেশ হাসি পাচ্ছে এখন। জনগণ বোকা নাকি সরকার নিজেই বোকা বুঝতে পারছেনা সে।
.
.
.
তিন মাস পেড়িয়ে গেছে। লুইস এখন 'ডেথ মন্টানার' কারাগারে। কলোম্বিয়ার সবচেয়ে কুখ্যাত কারাগার।
তোষকের নিচ থেকে "দি ডেইলি টাইটানিয়া" পত্রিকার কাটিং-টা বের করলো সে। তিনমাস আগের পত্রিকা। তাতে বড় বড় অক্ষরে ছাপানো আছে,
"লা মডেলোর কারাগারে একই সেলে ২৫জন কয়েদীর রহস্যজনক মৃত্যু এবং সাইকো কিলার লুইস গারাভিতোর পলায়ন..!!"
No comments:
Post a Comment